নতুন সংবিধান ও ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য জাতীয় নাগরিক পার্টির

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শুক্রবার বলেছেন, তাদের নতুন রাজনৈতিক দলের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য হলো ‘গণপরিষদ’ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে বাংলাদেশে ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করা।

নাহিদ ইসলাম

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে নতুন দলের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পরপরই এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে সংবিধানীয় একনায়কতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সকল সম্ভাবনা নির্মূল করতে হবে। আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য হলো গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে আমাদের দ্বিতীয় রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা করা।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাবাদী এবং জনপ্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল। ‘আমরা বিশ্বাস করি, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান আমাদের দ্বিতীয় রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করেছে,’ তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আর কখনও বিভক্ত হতে পারে না। বাংলাদেশে ভারতপন্থী বা পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির কোনো স্থান থাকবে না। আমরা সবাই বাংলাদেশ এবং জনগণের স্বার্থকে মাথায় রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতি ও রাষ্ট্র গড়ে তুলব।’

নাহিদ বলেন, ছাত্র ও জনগণ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এক ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেড় দশক ধরে ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করেছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে - হাজার হাজার শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকারকে উৎখাত করে আরেকটি সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য ঘটেনি,’ তিনি বলেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রোথিত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে জনগণের অধিকার ও মর্যাদার ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নতুন রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জনগণ এই অভ্যুত্থানে সাড়া দিয়েছে।

‘সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি গঠনের ঘোষণা দিচ্ছি,’ বলেন নাহিদ।

দ্বিতীয় রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। তাদের রাজনৈতিক অগ্রাধিকার হবে ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করা এবং তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমেই একটি পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উত্থান সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই যেখানে বিভাজনের পরিবর্তে ঐক্য, প্রতিশোধের জায়গায় ন্যায়বিচার এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বংশানুক্রমের পরিবর্তে যোগ্যতা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান থাকবে না।’

দ্বিতীয় রিপাবলিকে সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে মূলধারায় নিয়ে আসা হবে এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে সমান গুরুত্ব ও সর্বাধিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে নাহিদ জানান।

তিনি ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তিতে একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিজয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ারও অঙ্গীকার,’ তিনি যোগ করেন।

‘আসুন, আমরা হাতে হাত মিলিয়ে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ি যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকারের সংগ্রাম হবে রাজনীতির মূল লক্ষ্য, সমতা ও মানবিক মর্যাদা হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি। এখন নতুন স্বপ্ন দেখার, নতুন যাত্রা শুরু করার এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময়,’ তিনি বলেন।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কোনো অধরা স্বপ্ন নয়, বরং এটি হওয়া উচিত ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি প্রতিশ্রুতি।

নাহিদ তার বক্তব্য শেষ করেন 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ,’ ‘ক্ষমতা না জনতা,’ ‘আপস না সংগ্রাম’ এবং ‘দালালি না রাজপথ’ স্লোগান দিয়ে।