ট্রাম্পের তোপে জেলেনস্কি: ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থ লোপাটের অভিযোগ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির তীব্র সমালোচনা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধের জন্য জেলেনস্কিকেই দায়ী করে তিনি অভিযোগ করেছেন, এই যুদ্ধের মাধ্যমে জেলেনস্কি অল্প চেষ্টায় বিপুল অঙ্কের অর্থ কামাই করতে চান।

ট্রাম্প ও জেলেনস্কি

বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি রিয়াদে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটন ও মস্কোর প্রতিনিধিদের বৈঠকে ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে টিকে থাকা ইউক্রেনের পক্ষে সম্ভব নয়।

এর জবাবে ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে জেলেনস্কি ও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, গত তিন বছরে ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপের তুলনায় ২০০ বিলিয়ন ডলার বেশি খরচ করেছে আমেরিকা। অথচ ইউরোপ এই যুদ্ধ থেকে লাভবান হলেও আমেরিকা কিছুই পাবে না।

ট্রাম্প বলেন, ‘একজন সফল কৌতুক অভিনেতা (জেলেনস্কি) তাদের যুুদ্ধের জন্য আমেরিকাকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে বলেছিলেন। অথচ এই যুদ্ধ জেতার মতো নয়।’

তিনি আরও বলেন, জেলেনস্কি ইউক্রেনে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন এবং নির্বাচন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র বাইডেনকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পেরেছেন।

ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানালেও জেলেনস্কির কাজের সমালোচনা করে বলেন, ‘জেলেনস্কির কারণে ইউক্রেন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং কারণ ছাড়াই লাখো মানুষের প্রাণ গেছে।’

মেটা-কিওয়ার্ড: 

প্রায় তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে এসেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট সার্বিকভাবে তাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছেন। তবে ট্রাম্প পুনরায় হোয়াইট হাউসে আসার পর পাশার দান উল্টে গেছে। এ যুদ্ধের জন্য তিনি জেলেনস্কিকে দায়ী করেছেন। বলেছেন, সম্ভবত এই যুদ্ধের মাধ্যমে জেলেনস্কি অল্প চেষ্টায় বিপুল অঙ্কের অর্থ কামাই করতে চান। খবর বিবিসির।

চলতি সপ্তাহে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে রিয়াদে বৈঠকে বসে ওয়াশিংটন ও মস্কোর প্রতিনিধিরা। এ বৈঠকে কিয়েভের কোনো প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন জেলেনস্কি। একই সঙ্গে এ-ও জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া এ যুদ্ধে টিকে থাকা ইউক্রেনের পক্ষে সম্ভব নয়।

তবে বিষয়টি নিয়ে পাল্টা জেলেনস্কিকে তিরস্কার করেন ট্রাম্প। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প যেমন বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে জেলেনস্কিকে তিরস্কার করেছেন, তেমনি নিজের পূর্বসূরি জো বাইডেনেরও সমালোচনা করেন। ইউক্রেন যুদ্ধে খরচের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, গত তিন বছরে ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপের দেশগুলোর চেয়ে ২০০ বিলিয়ন ডলার বেশি খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ এ যুদ্ধ থেকে ইউরোপ তাদের পাওনা আদায় করে নিতে পারলেও যুক্তরাষ্ট্র কিছুই ফেরত পাবে না।

এই যুদ্ধকে ইউরোপের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ঘুমন্ত জো বাইডেন এ নিয়ে কোনো হিসেব করতে যাননি। অকুণ্ঠভাবে তিনি ইউক্রেনের পেছনে খরচ করে গেছেন। অথচ জেলেনস্কিও স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ অর্থ ইউক্রেনে পাঠিয়েছে, তার অর্ধেকও সেখানে পৌঁছায়নি।

আবার জেলেনস্কির সমালোচনা করে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, একটিবার চিন্তা করুন তো, একজন সফল কৌতুক অভিনেতা তাদের যুুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে বলেছিলেন। অথচ যুদ্ধটি এমন ছিল, যা জেতার মতো নয়। ফলে এ যুদ্ধ কখনো শুরু করাই উচিত ছিল না। এটি আবার এমন এক যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্প ছাড়া জেলেনস্কির পক্ষে তা মিটমাট করাও সম্ভব নয়।

সম্ভবত জেলেনস্কি চান, অল্প চেষ্টায় বিপুল অঙ্কের অর্থ কামাই করতে- এমন মন্তব্য করে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে আরও লেখেন, ইউক্রেনে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন জেলেনস্কি। তাই তিনি নির্বাচন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি কেবল একটা কাজই ভালো পেরেছেন তা হলো, বাইডেনকে তিনি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পেরেছেন।

ট্রাম্প আরও লেখেন, ইউক্রেনকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু জেলেনস্কি যা করেছেন, তার ফলে ইউক্রেন ভেঙে পড়েছে। কারণ ছাড়াই লাখো মানুষের প্রাণ গেছে। যুদ্ধ বন্ধ না হলে এ অবস্থা চলতেই থাকবে।