নাটুকে ফাইনাল: চ্যাম্পিয়ন তামিমের বরিশাল

উত্তেজনার রেণু ছড়ানো ফাইনাল উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১১তম আসর। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল। আজ শুক্রবার রাতে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত কুড়ি ওভারে তিন উইকেটে ১৯৪ রানের শক্তিশালী সংগ্রহ তোলে চিটাগং কিংস।

বিপিএলে তিন ফাইনাল হারের পর টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হলো বরিশালের ফ্র্যাঞ্চাইজি। ছবি: সংগৃহীত

জবাবে সাত উইকেট হারিয়ে তিন বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় তামিম ইকবালের বরিশাল (১৯৫/৭)। তিন উইকেটের জয়ে দ্বিতীয়বার শিরোপার স্বাদ পেল বরিশাল। দুবারই ব্যাক টু ব্যাক। এর আগে তিনটি ফাইনাল হেরেছিল বরিশালের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। অন্যদিকে দুবার তীরে এসে তরি ডুবিয়েছে চিটাগং। ২০১৩ সালে প্রথমবার ফাইনালে উঠে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে হেরেছিল তারা।

রান তাড়ায় ফরচুন বরিশালের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। ৮ ওভারে বিনা উইকেটে ৭৬ রান যোগ করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও তাওহিদ হৃদয়। পরের ওভারের প্রথম বলে তামিমের আউটে বিচ্ছিন্ন হয় শুরুর জুটি। ২৯ বলে ৫৪ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম। তিনি ইনিংস সাজান নয়টি চার ও এক ছক্কার সুবাদে।

তিন বলের মধ্যে বিদায় নেন নতুন ব্যাটার ডেউইড মালান। জোড়া ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই তৃতীয় উইকেটের পতন হয় বরিশালের। দলীয় শতকের আগে বিদায় নেন হৃদয়। তিনি অবশ্য ধীরেসুস্থে ব্যাট করেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেননি। ২৮ বলে ৩২ রানের মন্থর ইনিংস খেলে আউট হয়ে যান হৃদয়। ইনিংসে স্রেফ তিনটি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি।

পরে ইনিংসের হাল ধরেন কাইল মেয়ার্স। তাকে সঙ্গ দেন অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। তাদের দৃঢ়তায় বরিশাল ফেরে ম্যাচে। জয়ের আশাও দেখাতে থাকে তারা। কিন্তু এই দুজনকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেয় চিটাগং। নয় বলে তিন চারের সুবাদে ১৬ রানে বিদায় নেন মুশফিক।

২৮ বলে তিনটি করে চার-ছক্কায় ৪৬ রান করেন মেয়ার্স। মুশির বিদায়ের পর উইকেটে থিতু হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু টিকতে পারেননি তিনিও। ১১ বলে সাত রানে থেমে যান মাহমুদউল্লাহ। মিডল অর্ডারের তিন ব্যাটারকে ফিরিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে চিটাগং কিংস।

তিন ওভারে ২৬ রানের সমীকরণ ছিল ফরচুন বরিশালের সামনে। ১৮তম ওভারে এসে মাহমুদউল্লাহ ও মেয়ার্সকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। ওই ওভারে পাঁচ রান খরচ করেন বাংলাদেশি পেসার। চার ওভারে ৩৪ রানে চার উইকেট নিয়ে শরিফুলই চিটাগং কিংসের সবচেয়ে সফল বোলার। কিন্তু বিফলেই গেছে শরিফুলের দারুণ বোলিং।

বরিশালের সমীকরণ ১২ বলে ২০ রানে নেমে আসে। ১৯তম ওভারে চমক দেখান ব্যাটার রিশাদ হোসেন। দুই বলে নেন নয় রান। ছিল একটি ছক্কার মার। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ চলে আসে বরিশালের হাতের মুঠোয়। যদিও মোহম্মদ নবির ফিরে যাওয়াটা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে প্রয়োজন দাঁড়ায় আট রানের। যা সহজেই মিলিয়ে ফেলেন রিশাদ। ছয় বলে দুই ছক্কায় ১৮ রানের অপরাজিত ক্যামিও ইনিংসে তিনি হয়ে গেলেন বরিশালের শেষের নায়ক।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা চিটাগং কিংস দারুণ সূচনা করে। উদ্বোধনী জুটিতে ১২১ রান করে বন্দর নগরের দলটি। এ সময় ফিফটি করেন দুই ওপেনার খাজা নাফি ও পারভেজ হোসেন ইমন। ১৩তম ওভারে জুটি ভাঙে নাফির বিদায়ে। ৪৪ বলে সাতটি চার ও তিন ছক্কায় ৬৬ রান করেন এই ওপেনার। আরেক ওপেনার অবশ্য ইনিংসের শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন।

৪৯ বলে ছয়টি চার ও চারটি ছক্কার ওপর দাঁড়িয়ে ৭৮ রান করেন ইমন। দুই ওপেনারের দেখানো পথেই হাঁটেন তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা গ্রাহাম ক্লার্ক। হাফসেঞ্চুরির আভাস নিয়ে ফিরেছেন তিনি। ২৩ বলে ৪৪ রানে রান আউট হন ক্লার্ক। দুটি চার ও তিন ছক্কায় গড়া ছিল তার ইনিংসটা। ফরচুর বরিশালের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মোহাম্মদ আলি; চার ওভারে ২১ রানে নেন এক উইকেট।

সমান ওভারে ৩৫ রানে একটি শিকার ইবাদত হোসেন। খালি হাতে ফিরেছেন বাকি চার বোলার কাইল মেয়ার্স, তানভির ইসলাম, মোহাম্মদ নবি ও রিশাদ হোসেন।