জাতিসংঘ মহাসচিব: গাজায় জাতিগত নিধন চলবে না

গাজায় কোনো ধরনের জাতিগত নিধন চলবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বুধবার তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের মূলনীতি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যান্তোনিও গুতেরেস

ফিলিস্তিনিদের অবিচ্ছেদ্য অধিকার প্রয়োগের মূল কথা হলো তাদের নিজ ভূমিতে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার, জাতিসংঘের একটি কমিটির বৈঠকে এ কথা বলেন গুতেরেস।

‘আমরা দেখেছি কীভাবে ক্রমাগতভাবে এই অধিকারগুলো থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা দেখেছি একটা সম্পূর্ণ জাতিকে ভয়ংকর ও পরিকল্পিতভাবে অমানবিক ও অপদস্থ করা হচ্ছে,’ ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার প্রয়োগ বিষয়ক কমিটির ২০২৫ সালের অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।

‘সমাধান খোঁজার সময় আমাদের অবশ্যই সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তোলা যাবে না,’ সতর্ক করে দেন গুতেরেস। ‘আন্তর্জাতিক আইনের মূলনীতিতে অটল থাকা অত্যন্ত জরুরি। যে কোনো ধরনের জাতিগত নিধন এড়িয়ে চলা অপরিহার্য।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একদিন পর গুতেরেসের এই বক্তব্য এলো। ট্রাম্প প্রস্তাব করেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা অন্যত্র পুনর্বাসিত হবেন এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় দীর্ঘমেয়াদী মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবে। তবে গুতেরেস তার বক্তব্যে ট্রাম্প বা তার প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেননি।

বৈঠকে গুতেরেস ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর গাজায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।

‘প্রথমত, আমাদের অবশ্যই স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও সকল বন্দীর অবিলম্বে মুক্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে,’ তিনি বলেন। ‘আমরা আর মৃত্যু ও ধ্বংসের দিকে ফিরে যেতে পারি না।’

দুই রাষ্ট্র সমাধানের গুরুত্ব তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য একমাত্র টেকসই সমাধান হলো ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে সহাবস্থানকারী একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র।’

গুতেরেস পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ‘ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বাড়তে থাকা হিংস্রতা এবং অন্যান্য লঙ্ঘনের ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন,’ তিনি বলেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব জোর দিয়ে বলেন, হিংসাত্মক ঘটনা বন্ধ করতে হবে, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকারের প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে গুতেরেস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ঐক্য, সংলগ্নতা এবং অখণ্ডতা রক্ষা এবং গাজার পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।

মঙ্গলবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প তার প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি প্রস্তাব করেন যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র স্থানান্তর করতে পারে, যা ব্যাপক প্রতিবাদ এবং নিন্দার জন্ম দিয়েছে।

বুধবার দুপুরে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিককে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে ট্রাম্পের পরিকল্পনা কি জাতিগত নিধনের শামিল, তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, "মানুষের যে কোনো জোরপূর্বক স্থানান্তর জাতিগত নিধনের সমতুল্য।"