ঘুড়ি উড়ানো, আকাশে গুলি ছোড়া, একচাকা মোটরসাইকেল ‘অনৈসলামিক’ ঘোষণা

ঘুড়ি উড়ানো, আকাশে গুলি ছোড়া এবং এক চাকায় মোটরসাইকেল চালানোর মতো বিপজ্জনক কার্যকলাপ পাকিস্তানের লাহোর পুলিশের জন্য দীর্ঘদিনের গলার কাঁটা। দুই দশক ধরে চেষ্টা করেও এসব বন্ধ করতে না পেরে এবার ধর্মীয় নেতাদের সহায়তা নিয়ে জামিয়া নাইমিয়া থেকে একটি ফতোয়া জারি করেছে, যাতে এসব বিপজ্জনক কার্যকলাপকে ‘অনৈসলামিক’ ঘোষণা করা হয়েছে।

ছবি - সংগৃহীত

বুধবার লাহোরের ডিআইজি (অপারেশন্স) ফয়সাল কামরান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, জামিয়া নাইমিয়া এই ফতোয়া জারি করেছে। ইসলামে এমন কোনো কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে, যা মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। জামিয়া নাইমিয়ার অধ্যক্ষ আল্লামা ড. মুফতি মুহাম্মদ রাগিব হুসাইন নাইমির স্বাক্ষরিত এবং মুফতি ইমরান হানফির লিখিত ফতোয়ায় ইসলামী শিক্ষায় মানুষের জীবনের পবিত্রতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে কোনো কাজ যা মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তা ইসলাম-বিরোধী।

এই ফতোয়াটি জারি হয়েছে মুহাম্মদ আলী নকশবন্দী নামক একজন নাগরিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, যিনি এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা চেয়ে আলেমদের কাছে গিয়েছিলেন। ফতোয়ায় বলা হয়েছে, “প্রতিটি কাজ যা মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তা ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী। এসব কার্যকলাপ আত্মহত্যার শামিল, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।”

ডিআইজি ফয়সাল কামরান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই মারাত্মক কর্মকাণ্ড রোধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখবে। আমরা অভিভাবকদের সহযোগিতাও কামনা করছি যাতে তাদের সন্তানেরা এই অবৈধ ও অনৈসলামিক কাজ থেকে দূরে থাকে।”

প্রাণঘাতী ঝোঁক

ধারালো ঘুড়ির সুতো, আকাশে গুলি এবং এক চাকায় মোটরসাইকেল চালানোর ফলে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। শুধু জানুয়ারি মাসেই পুলিশ এক চাকায় মোটরসাইকেল চালানোর জন্য ১৫১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং ঘুড়ি উড়ানোর সাথে সম্পর্কিত ১৫০টি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া আকাশে গুলি চালানোর জন্য ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দুই দশকের সমস্যা

বিগত দুই দশক ধরে লাহোর পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেও সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। ২০২৪ সালে লাহোরে গড়ে প্রতিদিন ঘুড়ি উড়ানোর বিরুদ্ধে আটটি মামলা দায়ের হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২,৭৬৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সমসংখ্যক লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঞ্জাবের অন্যান্য অঞ্চলেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। শেখুপুরায় ১,১৭১টি, গুজরানওয়ালায় ২,০২৭টি, গুজরাটে ৩৮৮টি, রাওয়ালপিন্ডিতে ১,০১১টি, ফয়সালাবাদে ২,৮৬৬টি, মুলতানে ৬৩২টি এবং সাহিওয়ালে ৫৪১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।