রিজভী: জিয়া হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে 'র'

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর হাত ছিল বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগের পর এবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডে 'র' এর হাত ছিল বলে দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

গত ১১ মার্চ শনিবার যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এই দাবি করেন। তিনি বলেন, ''র' কাদের স্বার্থে কাজ করে তা এদেশের জনগণ জানে।'

জিয়া হত্যাকাণ্ডে ‘র’ এর সম্পৃক্ততার অভিযোগের পক্ষে ভারতের সানডে সাময়িকীর একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, 'প্রায় ২০-২৫ বছর আগে ভারতের সানডে সাময়িকির একটি প্রতিবেদনে জিয়া হত্যাকাণ্ডের সাথে 'র' এর সম্পৃক্ততার কথা প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জিয়াউর রহমানকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে 'র' একটি গোপন ফাইল খুলেছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই আসার পর ওই ফাইলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তার আগে ইন্দিরা গান্ধী এই ফাইলটি চালু করেন।'

প্রসঙ্গত, জরুরি অবস্থা জারি নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের মধ্যে ১৯৭৭ সালে ক্ষমতা ছাড়েন কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এরপর ভারতের সরকার গঠন করেছিল জনতা দল। ১৯৭৭-১৯৮০ এ দুই বছর সময়ে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দুজন মোরারজী দেশাই ও চরণ সিং। ১৯৮০ সালে পুণরায় প্রধানমন্ত্রীর পদে ফেরেন কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরো বলেন, 'ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসলে 'র' ফাইলটি পুনরায় চালু করে। এর কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমান হত্যা করা হয়। সানডে সাময়িকীতে যখন প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল তখন তার সম্পাদক ছিলেন এম জে আকবর। এম জে আকবর তখন কংগ্রেসপন্থী সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বর্তমানে রাজনৈতিক আদর্শ বদলে বিজেপিতে আছেন এবং ভারতে নরেন্দ্র মোদীর বর্তমান সরকারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।'

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান চলতে থাকে। এমনি এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন মেজর জিয়া। জিয়া ক্ষমতা দখলের পর বেশ কিছু ব্যর্থ অভ্যুত্থান হয়েছিল। অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল বলে ‍জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

১৯৮১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়া হত্যার সাথে জড়িত মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে চট্টগ্রামেই মেরে ফেলা হয়। এছাড়া জিয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য সামরিক আদালতের বিচারে দোষি সাব্যস্ত সেনাবাহিনীর ১২ কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতা নেন জেনারেল এরশাদ। টানা নয় বছর দেশ শাসনের একপর্যায় শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণআন্দোলনের মুখে পতন হয় এরশাদের। বর্তমানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূতের মর্যাদায় রয়েছেন।

২০১৪ সালে এক সমাবেশে মেজর জিয়ার স্ত্রী ও বিএনপির বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার স্বামী হত্যার জন্য তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদকে দায়ী করেন। মঞ্জু হত্যার মাধ্যমে জিয়া হত্যার রহস্যকে আড়াল করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে খালেদা জিয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এরশাদ বলেছিলেন, 'আমি জানি, জিয়ার হত্যার সময় তার রুমের পাশে কে ছিলেন। আমি জানি, জিয়ার প্রকৃত খুনি কে। এরশাদ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, '১৯৮১ সালের পর দুই বার খালেদা ক্ষমতায় যাওয়ার পরও স্বামীর খুনের বিচারের উদ্যোগ কেন নেননি বেগম জিয়া।'