মুক্তির পরও অনিশ্চয়তা: গাজার বন্দীদের মিশ্র অনুভূতি

ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীনতা যেন এক মিশ্র আশীর্বাদের মতো। চলমান গাজা সংঘাতের অবসানে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চুক্তির অংশ হিসেবে মুক্তি পেলেও, অনিশ্চয়তার কালো মেঘ তাদের ভবিষ্যৎকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এই সপ্তাহে রামাল্লায় ফিরে আসা দানিয়া হানাতশেহর মুক্তির আনন্দ গাজার ধ্বংসযজ্ঞ এবং পুনরায় গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় ঢেকে গেছে।

ছবি - সংগৃহীত

প্রায় পাঁচ মাস কারাবাসের পর এটি হানাতশেহর দ্বিতীয় মুক্তি। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো যে কোনো সময় গ্রেপ্তারের জন্য প্রস্তুত। এটা অসহায় বোধ করায়, যেন আত্মরক্ষার কোনো উপায় নেই।’ হানাতশেহ যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তিপ্রাপ্ত ৯০ জন নারী ও মেয়ের মধ্যে একজন। এই চুক্তিতে প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি, ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ৩৩ জন বন্দীর মুক্তি এবং অঞ্চলে সাহায্য বৃদ্ধির বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত।

হানাতশেহকে প্রথমে ২০২৩ সালের নভেম্বরে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরবর্তীতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সময় মুক্তি দেওয়া হয়। আগস্টে ইসরায়েলি বাহিনী তার বাড়ি থেকে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করে। দুবারই তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানানো হয়নি। ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয় ‘সন্ত্রাসবাদ সমর্থনের’ অভিযোগ করলেও, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা বা বিচার করা হয়নি।

হানাতশেহর অভিজ্ঞতা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সাধারণ। গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় প্রতিটি পরিবারেরই কারো না কারো ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীর সংখ্যা ১০,০০০ অতিক্রম করেছে।

‘প্রশাসনিক আটক’ নামক ইসরায়েলি নীতি কারণে ব্যক্তিদের অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই কারাগারে আটক করা হয়। জেরুজালেমের বন্দীদের অভিভাবক কমিটির প্রধান আমজাদ আবু আসাব এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার অভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের একই অভিযোগে পুনরায় গ্রেপ্তার করা যাবে না। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কারাগারে বন্দীদের অবস্থার অবনতি হয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীরা অনুপযুক্ত খাবার, চিকিৎসা সেবা এবং জনাকীর্ণ পরিবেশের অভিযোগ করেছেন।

মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে বিশিষ্টজন হলেন ৬২ বছর বয়সী খালিদা জারার, ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য জনপ্রিয় ফ্রন্টের একজন নেতা।

কিছু পরিবার মুক্তি উদযাপন করলেও, অন্যরা উদ্বিগ্ন যে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ইয়াসার সাদাতের জন্য, তার মা আবলা আব্দেলরাসুলের মুক্তি এক মিশ্র অনুভূতির মুহূর্ত। তার বাবা আহমেদ সাদাত, কারাগারে আছেন এবং তিনি মুক্তি পাবেন কিনা তা অনিশ্চিত।

ইসরায়েলিদের হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত কিছু বন্দীর মুক্তি বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে।

বিতর্ক সত্ত্বেও, কিছু ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময়কে ন্যায্য বলে মনে করেন। অন্যরা, যেমন আমাল শুজাইয়া, তাদের পরিবারের সঙ্গে হারানো সময়ের ব্যক্তিগত ক্ষতির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছেন। ‘আজ আমি আমার পরিবার এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে আছি। এটি এক অবর্ণনীয় আনন্দ,’ শুজাইয়া বলেন।