ইনস্টিটিউটের দাবিতে শিক্ষার্থীরা এবার মহাসমাবেশের ডাক দিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ইনস্টিটিউটের দাবিতে এবার মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। টানা তৃতীয় দিনের মত রাজধানীর নিউ মার্কেট মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করার পর মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দেয় ছাত্রীরা। ছাত্রীরা আগামীকাল বৃহস্পতিবার নিউ মার্কেট মোড়ে মহাসমাবেশ শেষে সংবাদ সম্মেলন করবে বলে জানিয়েছে।

গত সোমবার থেকে টানা তৃতীয় দিনের মত বুধবারও বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তীব্র রোদ উপেক্ষা করে রাজধানীর নিউ মার্কেট মোড়ে আবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রীরা। বুধবার অবরোধ শেষে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মুখপাত্র ক্লদিং অ্যান্ড টেক্সটাইল বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী সাব্রিন সুলতানা সুমীনূর প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, 'তারা ভাবছে, আমরা মেয়ে বলে আন্দোলন ছেড়ে উঠে যাব, আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ব। তাদের এ ধারনা আমরা ভুল প্রমাণ করে ছাড়ব। আমরা আগামীকাল থেকে নতুন উদ্যমে আন্দোলন শুরু করব।'

তিনি বলেন, 'আমাদের আন্দোলন থামাতে নানা ধরনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে শিক্ষকরা। তাদের হুমকির কারণে মাইক সরবরাহকারীরা আমাদের মাইক ভাড়া দেয়নি। আমরা বলতে চাই, মাইক না দিয়ে আন্দোলন ফিরানো যাবে না। আমাদের কলেজকে ইনস্টিটিউট করার ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।'

মহাসমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, 'প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবারও একই সময়ে অর্থাৎ বেলা ১১টার দিকে তারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে নামবেন।' তবে বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিতে অন্যান্য দিনের চাইতে উপস্থিতি অনেক বেশি থাকবে বলে জানান তিনি। সড়কে মহাসমাবেশ করার মাধ্যমে তারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচিও একই সাথে পালন করবে এবং বিকালে সংবাদ সম্মেলন করবে।

বুধবার ছাত্রীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করলে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফাতিমা সুরাইয়াসহ সাত-আটজন শিক্ষক নিউ মার্কেট মোড়ে এসে শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানালেও তাতে আন্দোলনকারীরা সাড়া দেয়নি।

আন্দোলনরত ছাত্রীদের ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে ফিরে যেয়ে সংবাদ সম্মেলরনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, 'আমাদের কিছু সমস্যা আছে মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ইনস্টিটিউট হলেই যে সেগুলোর সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টি এমন নয়। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে দুটি কমিটি হয়েছে, তাদের প্রতিবেদন আসার আগেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী এমন আন্দোলনে আমরা বিরক্ত।'

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে চিন্হিত করে অধ্যক্ষ বলেন, 'জনদুর্ভোগ তৈরি করা সন্ত্রাসীদের কাজ। শিক্ষার্থীরা এমন করবে তা আমরা কখনোই চান না। গতকাল সারাদিন আমরা শিক্ষক সভা করে কলেজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তুলেও ধরেছি। আমরাও উন্নয়ন চাই, তবে সেটা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে হবে, না কলেজের মাধ্যমে হবে সে সিদ্ধান্ত সরকারের।'

এর আগে ইনস্টিটিউটের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কলেজের অধ্যক্ষ, ঢাবির জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন, উপাচার্য ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছিল ছাত্রীরা। পরবর্তী সময়ে ওই বছরেরই ৪ অক্টোবর টানা ৯ ঘণ্টা নীলক্ষেত-নিউ মার্কেট মোড় অবরোধ করে রেখেছিল তারা।

অবরোধের পর শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে আশ্বাস দেন। ছাত্রীদের দাবির মুখে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য শিক্ষা সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠিত হয়। তবে কমিটি গঠনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার (১৩ মার্চ) থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিনই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন তারা।