প্রথম বিদেশ সফরেই বেইজিং, কূটনৈতিক কৌশলে নয়া ইঙ্গিত?

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আজ তিন দিনের সরকারি সফরে চীন যাত্রা করেছেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ির আমন্ত্রণে এই সফরে যাওয়া তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সরকারি সফর। আগামী ২৪ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরবেন।

মো. তৌহিদ হোসেন

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই সফরে ঋণের সুদের হার কমানো, পানি সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়, চিকিৎসা সহযোগিতা জোরদার, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের ভূমিকা বাড়ানোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। গত আগস্টে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটিকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর’ হিসেবে বিবেচনা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

আগামীকাল বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তৌহিদ হোসেন। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ঢাকার পূর্বের অনুরোধ অনুযায়ী পানি সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়ের বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত বেইজিং। এই সফরে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তিস্তা নদী প্রকল্পে চীনের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের জন্য চীনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত পূর্ববর্তী সরকারগুলোর থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। পূর্ববর্তী সরকারগুলো প্রথম সফরের জন্য প্রায়শই ভারতকে বেছে নিতো।

চীনের সঙ্গে বহুমুখী আলোচনা

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সরকারি আলোচনার পাশাপাশি, উপদেষ্টা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন এবং চায়না ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং সাংহাই ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে বক্তৃতা দেবেন। সাংহাইতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করবেন তিনি।

গত রবিবার, চীনের রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সফরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি চীনের সম্মান পুনর্ব্যক্ত করে, দেশের স্থিতিশীলতা, সংস্কার, গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং উন্নয়নমূলক উদ্যোগের প্রতি সমর্থন পুনরায় জানিয়েছেন।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য বৈষম্য

চীন বাংলাদেশের অন্যতম বড় বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে অবকাঠামো প্রকল্পে। ঋণের ওপর বর্তমানে ২-৩% সুদের হার কমিয়ে ১% করা, প্রতিশ্রুতি ফি মওকুফ, এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১৫ বছর থেকে ৩০ বছরে বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর চীনা বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং চীনে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়টিও আলোচনায় থাকবে। ‘অর্থনৈতিক বিষয়গুলি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’ বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

চীন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার হলেও বাণিজ্যে বৈষম্য বিরাজমান। বাংলাদেশ প্রতিবছর চীন থেকে প্রচুর পণ্য আমদানি করে, অথচ রপ্তানি অনেক কম। এই বৈষম্য দূর করার বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও স্বাস্থ্য সহযোগিতা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সক্রিয় ভূমিকা কামনা করে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে, বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কুনমিংয়ে হাসপাতাল নির্ধারণ এবং বাংলাদেশে চীনা হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব দিতে পারে ঢাকা।

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ৫০ বছর

চীন ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এই সফর ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির সঙ্গে মিলিত হয়েছে। উভয় দেশ এই কীর্তি উদযাপনের জন্য বছরব্যাপী কার্যক্রম পরিকল্পনা করেছে।