সাভারে আ. লীগ নেতার মদদে কারখানা দখলের অভিযোগ

ঢাকার সাভারে দিন-দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতার মদদে একটি কারখানা দখলের অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের ২৬ মে সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুরে 'বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড' কারখানায় কয়েকশ' সন্ত্রাসী ঢুকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দিয়ে কারখানাটি দখল করে নেয়।

ছবি - সংগৃহীত

অভিযোগ রয়েছে, ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগ নেতা ও সি পার্ল গ্রুপের মালিক আমিনুল হক শামীম, সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম এবং সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় আ. লীগ নেতাকর্মীরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

ভুক্তভোগীদের দাবি, আদালতের দুটি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কারখানাটি দখল করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দখলকারীরা পুলিশের সামনেই সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায়। এমনকি সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালায়।

কারখানার তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক অভিজিৎ রায় দুটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছেন। প্রথম মামলাটি (নং- ৬৫৪/২০২৪) ২০২৪ সালের ২৮ মে ঢাকার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা হয়। দ্বিতীয় মামলাটি (নং- ৬৬৮/২০২৪) ৩০ মে একই আদালতে দায়ের করা হয়। মামলা দুটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা এ বিষয়ে বলেন, ‘মামলা দুটির তদন্ত কাজ চলছে। দুজন তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলা দুটি নিয়ে তদন্ত কাজ করছেন। অনেক আসামি রয়েছে, সবার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।’

অভিজিৎ রায় জানান, ২০০৭ সালে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার পরিবার ২৪.২৯ শতাংশ শেয়ার কিনে কারখানাটি পুনরায় চালু করেন। ২০১৬ সালে আগের মালিকপক্ষ চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে কারখানার মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। উচ্চ আদালত অভিজিৎ-এর বাবা বিশ্বজিৎ কুমারকেই কারখানা পরিচালনার নির্দেশ দেন। কিন্তু আগের মালিকপক্ষ বিক্রিত শেয়ার সি পার্ল গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয় এবং তারপর থেকেই কারখানাটি দখলের চেষ্টা শুরু হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আদালত থেকে ১৪৫ ধারার আদেশ আনা হলেও, তারা আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে কারখানাটি দখল করে।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য প্রমিত রায় বলেন, ‘আমাদের পরিবার এই ঘটনার পরে প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। আমার বাবা এবং চাচা এই কারখানায় বহু টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাবে সব হারিয়েছেন তারা।’ 

ভুক্তভোগী পরিবার আরও জানায়, ২০২৪ সালের ৫ মে কারখানাটির মালিকানার জটিলতা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের কার্যালয়ে একটি মিটিং হয়েছিল। সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম-সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠকে কোনো সমাধান হয়নি। এর কিছুদিন পরেই কারখানা দখলের ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে আমিনুল হক শামীম এবং মির্জা আজমের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। মেসেজ পাঠালেও কোনো উত্তর মেলেনি।