ক্ষমতার ভারসাম্য, গণভোট, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদসহ ব্যাপক পরিবর্তনের প্রস্তাব

সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পেশ করেছে। প্রতিবেদনে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা অপসারণ করে সাম্য, মানব মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে জাতীয় সংবিধান কাউন্সিল গঠন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিতকরণ, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নসহ ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করেছে।

ছবি - সংগৃহীত

প্রফেসর আলী রিয়াজের নেতৃত্বাধীন কমিশন সংবিধান সংশোধনের জন্য গণভোটের বিধান পুনর্বহালেরও প্রস্তাব করেছে। জাতীয় সংসদ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নিম্নকক্ষ এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কমিশন মনে করে, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে স্বৈরতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদের উত্থানের অন্যতম কারণ প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা। ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন রোধে রাষ্ট্রের তিনটি শাখা এবং প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই কাউন্সিলে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, উভয় কক্ষের স্পিকার, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার এবং অন্যান্য দলের প্রতিনিধি থাকবেন।

কমিশন মনে করে, প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানো জরুরি। নির্বাচন কমিশন এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নিয়োগের ক্ষমতা জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের ওপর অর্পণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবিশ্বাস প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা সহজ করার এবং ৭০ নং ধারা সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাবও করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের একটি কাঠামো প্রদান করা হয়েছে এবং এর উপদেষ্টা নির্বাচনের দায়িত্ব জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিচার ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের একক কাঠামো বজায় রেখে সকল বিভাগীয় শহরে স্থায়ী হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার জন্য স্থানীয় সরকার কমিশন এবং জেলা ও সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে সমন্বয় পরিষদ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মৌলিক অধিকারের পরিধি সম্প্রসারণ এবং একটি সম্পূর্ণ চার্টারের মাধ্যমে তাদের সংবিধানিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত পছন্দের পরিবর্তে একটি নির্বাচক মন্ডলীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং রাষ্ট্রপতির চার বছরের কার্যকালের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রফেসর আলী রিয়াজ আশা প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক দলগুলো এই সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোর ব্যাপারে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাবে।