অল্প বয়সে চুল পাকা প্রতিরোধে যা করতে পারেন

বয়স বাড়লে চুল সাদা হয়ে যাবে, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু কম বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়া দুশ্চিন্তার কারণ। সাধারণত মেলানিন হরমোন ও জিনগত বৈশিষ্ট্য চুলের রঙ বহন করে। বয়স বাড়ার কারণে প্রাকৃতিকভাবে মানুষের শরীরের মেলালিন হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে। আর তখনই চুল সাদা হতে দেখা যায়। এছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলেও অল্প বয়সে আপনার চুল সাদা হয়ে যেতে পারে।

অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ

আপনি যে খাবার গ্রহণ করছেন তা যথেষ্ট পুষ্টিসম্পন্ন না হলে আপনার চুলে পাক দেখা দিতে পারে। আবার ধূমপায়ী হওয়ার কারণেও দেখা দিতে পারে সাদা চুল। প্রচুর ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের সাইড ইফেক্ট হিসেবে অনেকের চুল সাদা হয়ে যেতে পারে। এছাড়া হাইপো বা হাইপার থায়রয়ডিজমের কারণে আপনার অটোইমিউন ডিজিজ দেখা দিতে পারে। এই ডিজিজের কারণে চুল পেকে যায় অল্প বয়সেই। আবার প্রজেরিয়া এবং প্যানজেরিয়া রোগ হলেও চুল পাকার মতো সমস্যা হতে পারে।

অল্প বয়সে চুল পাকতে শুরু করলে ভেঙ্গে পড়বেন না, সচেতন হয়ে উঠুন আজই। 

প্রতিরোধে যা করা যেতে পারে

দীর্ঘদিন মাথায় কেমিকেলযুক্ত কলপ ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই কেমিকেলের ভরসায় না থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে চুল সাদা হওয়া প্রতিরোধ করার চেষ্টা করুন।

আমলকি

চুল পেকে যাওয়া রোধে আমলকির জুড়ি নেই। ভিটামিন সি আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ আমলকি চুলের জন্য খুবই কার্যকর। আমলকি ছেঁচে নিয়ে হালকা বেটে নিন। এরপর একটু পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। আমলকির এই পেস্ট চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে মেখে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন।এরপর পানি দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু-একদিন আমলকির পেস্ট মাখলে চুল পাকা রোধে উপকার পাবেন।

কারি পাতা ও নারকেল তেল

খাবারের মেন্যুতে নিয়মিত কারি পাতা রাখুন। এটির পুষ্টি উপাদান আপনার পেকে যাওয়া চুলগুলোকে পুনরায় কালো করতে সাহায্য করবে। এর পাশাপাশি নারকেল তেলে কিছু তাজা কারিপাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে ছেড়ে দিয়ে পাঁচ-সাত মিনিট ধরে গরম করুন। তেলটা ঠান্ডা হয়ে গেলে পুরোচুলের গোড়ায় গোড়ায় মাখুন। আধা ঘণ্টা রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে সারারাত এই কারিপাতা-নারকেল তেল মাথায় রাখতে পারেন। পরদিন সকালে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

মেহেদি পাতা

আপনি চাইলে পেকে যাওয়া চুল মেহেদি পাতার রসে রাঙিয়ে নিতে পারেন। কালো চুলের পাশাপাশি মেহেদিরঙা কিছু চুল অনেকের ক্ষেত্রে ভালো মানায়। মেহেদির গুঁড়ো, কফি, দই ও লেবুর রস একত্রে মিশিয়ে দুই-তিন ঘণ্টার জন্য রেখে দিন। তারপর এই মিশ্রণ চুলে মেখে দুই-তিন ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর প্রথমে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। পরে চুলে শ্যাম্পু করে নিন।

লেবুর রস ও বাদামের তেল

বাদাম বা অ্যালমন্ডের তেলের সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে ঘষে ঘষে চুলের গোড়ায় মাখুন। মাঝে মাঝে এই বাদামের তেল ও লেবুর রসের মিশ্রণ চুলে মাখলে চুল পাকা কমতে সাহায্য করে।

চা-পাতা

চুল পাকা রোধ করতে চা-পাতা খুবই কার্যকর। কিছু পরিমাণ চা-পাতা নিয়ে অল্প পানিতে ঘন করে সেদ্ধ করুন। পানি ঠান্ডা হলে চুলে মাখুন। চুলসহ মাথার তালুতে এই চায়ের পানি মেখে ঘণ্টা খানেক রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না।

এছাড়া

অল্প বয়সে চুল পাকার অন্যতম কারণ হতে পারে পরিবেশ দূষণ বা অতিবেগুনী রশ্মি, তাই বাইরে বের হলে সবসময় ছাতা নিয়ে বের হন। চুল সাদা হয়ে যাওয়ার কারণ জেনে সঠিক চিকিৎসা নিন। চুল সাদা হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে ধূমপান ছাড়ার পাশপাশি আপনার খাবারের মান ও পুষ্টিগুণ বুঝে প্রয়োজনীয় খাবার খান। চুল পাকা রোধে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, কপার, ভিটামিন ‘বি১২’, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ডি৩’, ফেরিটিন ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খান।