সীমান্তে মসজিদ পুনর্নির্মাণে বিএসএফের বাধা

সিলেটের বিয়ানীবাজারের গজুকাটা সীমান্তে ২০০ বছরের পুরোনো একটি মসজিদ পুনর্নির্মাণে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) চার বছর ধরে বাধা দিচ্ছে। ভিত্তি স্থাপন ও পিলার বসানোর কাজ শুরু হলেও বিএসএফের বাধার মুখে চার বছর ধরে মসজিদ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। খবর ইউএনবি।

ছবি - সংগৃহীত

বিষয়টি সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) সদর দপ্তরসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে বেশ কয়েকবার বৈঠক হলেও পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু করার ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি।

আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি নেই। যেহেতু মসজিদটি এই এলাকার মধ্যেই পড়ে, তাই পুনর্নির্মাণের জন্য ভারতের সম্মতি প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিলেও বিএসএফ গত চার বছর ধরে এই প্রকল্পটিতে বাধা দিচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বিজিবি, ভারতীয়দের ১৫০ গজের মধ্যে সীমান্ত বেড়া নির্মাণের বিরোধিতা করেছে।

যদিও বিজিবি কর্মকর্তারা পূর্বে এই বাধার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, তবে গত দুই বছর ধরে এই বিষয়ে যোগাযোগ কমে গেছে। বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান, পিপিএম, বলেছেন যে দুই দেশের সরকারের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা তাঁর পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মসজিদের অবকাঠামো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। রডগুলো বেরিয়ে আছে, ছাদ ধসে পড়ছে, যার ফলে নামাজ পড়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই গ্রামবাসীরা কাছেই নতুন একটি মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জয়নাল ইসলাম জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে এই সমস্যা সমাধানের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আফতাব উদ্দিন ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। গ্রামবাসীরা চার বছর আগে মসজিদটি পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং বিজিবির সহযোগিতা চেয়েছিল। বিএসএফের সাথে আলোচনার পর, গ্রামবাসীদের মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে কোনো আপত্তি থাকবে না। তারা তহবিল সংগ্রহ করে ভিত্তি এবং পিলারের কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু ছাদের কাজ শুরু হলে বিএসএফ হস্তক্ষেপ করে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়।

বিজিবি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে বিএসএফ প্রাথমিকভাবে একটি ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে মসজিদ পুনর্নির্মাণে আপত্তি না করার সম্মতি দিলেও পরে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান বলেছেন, বিএসএফ মসজিদ পুনর্নির্মাণের বিরোধিতা করেনি, বরং মসজিদের সম্প্রসারণের বিরোধিতা করেছে। তিনি আরও যোগ করেছেন যে এই ধরনের এলাকায় নতুন কোনো স্থাপনা নির্মাণের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, যা বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে।