কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য বাবা-মা এবং দাদা-দাদীদের স্পন্সর করার সুযোগ (পিজিপি) ২০২৫ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কানাডার ইমিগ্রেশন, শরণার্থী এবং নাগরিকত্ব কানাডা (আইআরসিসি) এই ঘোষণা দিয়েছে, যা অনেক বাংলাদেশি পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

flag canada 1কানাডার পতাকা

আইআরসিসি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের মধ্যে জমা পড়া আবেদনগুলি প্রক্রিয়া করা হবে। তবে ২০২৫ সাল থেকে নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না। এর আগে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে কানাডার স্থায়ী বাসিন্দারা তাদের বাবা-মা এবং দাদা-দাদীদের স্থায়ীভাবে কানাডায় আনতে পারতেন। বিকল্প হিসেবে, পরিবারগুলি সুপার ভিসার মাধ্যমে আত্মীয়দের টানা পাঁচ বছর পর্যন্ত কানাডায় রাখতে পারবেন।

এই সিদ্ধান্ত কানাডার সামগ্রিক অভিবাসন হ্রাস করার পরিকল্পনার অংশ, যার ফলে ২০২৫ সালে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা ২০% কমে যাবে। ২০২৫ সালে পিজিপি কর্মসূচির আওতায় ২৪,৫০০ জনকে স্থায়ী বাসিন্দার অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও, পরবর্তী বছরগুলিতে এই সংখ্যা আরও কমবে।

কঠোর অভিবাসন নীতিমালা

ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসন-বান্ধব হলেও, কানাডার বর্তমান সরকার দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ মোকাবেলায় অভিবাসন নীতিমালা কঠোর করছে। এর ফলে আবাসন এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর চাপ কমবে বলে সরকার মনে করছে।

এই কঠোর নীতির কারণে ২০২৫ সালের মধ্যে ১.২ মিলিয়নেরও বেশি অস্থায়ী বাসিন্দাকে কানাডা ছাড়তে হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

বার্ষিক স্থায়ী বাসিন্দার কোটা ২০২৫ সালে ৩৯৫,০০০, ২০২৬ সালে ৩৮০,০০০ এবং ২০২৭ সালে ৩৬৫,০০০ এ নেমে আসবে। পারিবারিক স্পন্সরশিপের জন্য ২০২৫ সালে মাত্র ৯৪,৫০০ ভিসা বরাদ্দ থাকবে, যার মধ্যে ৭০,০০০ ভিসা স্ত্রী এবং সন্তানদের জন্য।

কানাডার নতুন নিয়মে বাংলাদেশি পরিবারগুলো চিন্তিত

পাঁচ বছর ধরে কানাডায় রেস্তোরাঁয় কাজ করা প্রসেনজিৎ দাস জয় বলেন, ‘কঠোর নিয়মের কারণে এখন পিআর পাওয়া অনেক কঠিন। পিআর ছাড়া অনেক বাংলাদেশি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন।’

একই রকম মত দীর্ঘদিন কানাডায় ব্যবসা করা সালাহউদ্দিন বাচ্চুর। তিনি বলেন, ‘আগে পরিবারের সদস্যদের কানাডায় আনা অনেক সহজ ছিল। এখন প্রক্রিয়াটি জটিল। প্রতি বছর হাজার হাজার লোক পিজিপির জন্য আবেদন করে, তবে লটারির মাধ্যমে মাত্র কয়েকজন নির্বাচিত হয়।’

অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এক লাখের বেশি বাংলাদেশি কানাডায় বসবাস করছেন। ১৯৮০ সাল থেকে কানাডায় বাংলাদেশিদের অভিবাসন শুরু হলেও গত দুই দশকে এই সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আগে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য চাকরি বা পিআর পাওয়া তুলনামূলক সহজ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি কানাডার অভিবাসন নীতিমালা কঠোর হওয়ায় পরিবারগুলোর পুনর্মিলন কঠিন হয়ে পড়েছে। পিজিপি স্পন্সরশিপ বন্ধ হওয়ায় অনেকের প্রিয়জনদের কানাডায় আনার স্বপ্ন ভেঙে গেছে।

কঠোর অভিবাসন নীতি

কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসেবার ওপর চাপ কমাতে সরকার অভিবাসন নীতিমালা কঠোর করেছে।

ট্রুডো সরকারের মতে, এই পরিবর্তন অপরিহার্য। গত দশকে কানাডার অভিবাসী জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১৫ সালে চালু করা উদার নীতির কারণে বলে অনেকে মনে করেন।

বর্তমানে আবাসন সংকট ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির জটিলতা গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানেই সরকার কঠোর অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে বদ্ধপরিকর।

বাংলাদেশি পরিবারগুলোর স্বপ্ন ভঙ্গ

কানাডায় পিজিপি কর্মসূচি বন্ধ ও পিআর বরাদ্দ কমে যাওয়া অনেক বাংলাদেশি পরিবারের জন্য বড় ধাক্কা। এর ফলে অনেক পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং কানাডায় তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হবে।

কানাডার অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হওয়ার আশঙ্কায় আগামী বছরগুলোতে নতুন অভিবাসী এবং তাদের পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.