গাজায় তীব্র ঠান্ডায় ২০ দিন বয়সী শিশুর মৃত্যু

গাজা উপত্যকায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে হাজার হাজার শিশু নিহত হয়েছে। এখন এই শীতে তীব্র ঠান্ডার কারণেও মারা যাচ্ছে অবরুদ্ধ এই ছিটমহলের শিশুরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।

ম্যাপে গাজা উপত্যকার অবস্থান

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজায় রোববার (২৯ ডিসেম্বর) তীব্র ঠান্ডায় জুমা আল বাত্রান নামের ২০ দিন বয়সী একটি শিশু মারা গেছে। তার যমজ ভাই একটি স্থানীয় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) রয়েছে।

জুমা আল বাত্রানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন গাজার ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান মারওয়ান আল হামাস। তিনি বলেছেন, 'এর ফলে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে মারা যাওয়া মোট শিশুর সংখ্যা ৫ জনে দাঁড়িয়েছে।'  

এদিকে শিশুটির বাবা ইয়াহিয়া আল বাত্রান বলেছেন, 'গাজায় এখন বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই, খাবারও নেই। গ্যাসের অভাবে প্রচন্ড ঠান্ডা পানি গরম করা যাচ্ছে না।'  

তিনি আরও বলেন, 'আমার চোখের সামনে আমার সন্তান মারা গেছে। জুমা মারা গেছে এবং আমি আশঙ্কা করছি, তার ভাই আলীও মারা যেতে পারে। অথচ এটিই এখন এখানকার স্বাভাবিক চিত্র।' 

ইয়াহিয়া আল বাত্রান জানান, তিনি এবং তার স্ত্রী এখন মধ্য গাজার দেইর আল বালাহ শহরে একটি ছেঁড়া তাঁবুতে বসবাস করছেন।  

গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) গাজার আশ্রয়কেন্দ্রের তাঁবুতে তীব্র ঠান্ডায় জমে সিলা মাহমুদ নামের তিন সপ্তাহ বয়সী এক মেয়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির বাবা মাহমুদ আল ফাসিহ মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেছেন, 'খান ইউনিস শহরের বাইরে মাওয়াসি এলাকায় আমাদের তাঁবু। আমরা আমাদের মেয়েকে একটি কম্বলে মুড়িয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু এটি যথেষ্ট ছিল না।'     

তিনি আরও বলেন, 'তাঁবুতে বাইরের ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করছিল আর আমরা যেখানে ছিলাম সেখানকার মেঝেও অনেক ঠান্ডা ছিল। এছাড়া মঙ্গলবার রাতে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গিয়েছিল। সকালে সিলাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি।' প্রসঙ্গত, মাওয়াসি গাজার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত একটি জনশূন্য এলাকা।  

খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পরিচালক আহমেদ আল ফাররা জানিয়েছেন, শিশুটি হাইপোথার্মিয়ায় মারা গেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় আরও দুইটি শিশু হাইপোথার্মিয়ায় মারা গেছে। এদের মধ্যে একটি ৩ দিন বয়সী অপরজন ১ মাস বয়সী ছিল।  

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বোমা হামলায় হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়েছে। এর ফলে উপত্যকার অনেকেই বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। দেইর আল বালাহ এবং খান ইউনিস ও রাফাহ এর দক্ষিণাঞ্চলে স্থাপন করা এসব শরণার্থী শিবিরগুলো তাড়াহুড়ো করে বানানো হয়েছিল।  বর্তমানে এই তীব্র শীতের মধ্যে এগুলো বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। 

সূত্র: দ্য নিউ আরব