বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের রিজার্ভ কমেছে ১.৭২ বিলিয়ন ডলার

দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলার রিজার্ভ গত পাঁচ মাসে ১.৭২ বিলিয়ন ডলার কমেছে।  এই পরিস্থিতিতে দেশের চলমান ডলার সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কৌশলগত ব্যর্থতার প্রতিফলন ঘটেছে।

ডলার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য স্বল্প সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধের নির্দেশ, রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য বাজার থেকে ডলার ক্রয় এবং ডলার বাজারে কারসাজির ওপর পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব—এই তিনটি কারণে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ফলে ডলারের দাম ১২০ টাকা থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ ১২৯ টাকায় উঠেছে।

ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে বিদেশি ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়েছে। ঋণগ্রহীতাদের এখন বিদেশি মুদ্রায় ঋণ পরিশোধের জন্য আরও বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, নভেম্বরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৪.৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা অক্টোবরে ছিল ৪.৬২ বিলিয়ন ডলার। এই পরিমাণ গত ৪৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে রিজার্ভ ছিল ৪.৩৪ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪.৯৮ বিলিয়ন ডলার, আগস্টে ৫.২৭ বিলিয়ন ডলার, জুলাইয়ে ৬.০৯ বিলিয়ন ডলার এবং জুনে ৬.১০ বিলিয়ন ডলার।

ব্যাংকারদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশি ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন, যার ফলে ডলার সংকট আরও গভীর হয়েছে।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম মাসরুর রিয়াজ বলেছেন, ‘বাজারে এ ধরনের চাপ এড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু বড় অর্থ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো উচিত ছিল।’

তিনি আরও বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া রোধ করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। একই সময়ে, বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ বাড়াতে বাজার থেকে ডলার কিনছে, যা ইতিমধ্যেই চাপের মুখে থাকা বাজারে আরও চাপ সৃষ্টি করছে।

ডলার বাজার স্থিতিশীল করতে বাজারের পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়নের ভিত্তিতে কৌশলগতভাবে ডলার সরবরাহ করা উচিত বলে মাসরুর পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১২০ টাকার সরকারি হার থাকা অবস্থায় ১২৩ টাকার মধ্যে ডলার কেনার নির্দেশনার সমালোচনা করে বলেছেন, এটি বাজারে বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

ব্যাংকাররা বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলারের মজুত উন্নত হয়নি।

২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়কালে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ১১.১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ৮.৮ বিলিয়ন ডলার ছিল।

এই একই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১৭.৮২ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৯.৯০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অশান্তির কারণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে, যা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও জটিল করে তুলেছে।