ক্যাডারদের আন্দোলন প্রত্যাহারের দাবি ৪৮ নাগরিকের

দেশে-বিদেশে বসবাসরত ৪৮ জন নাগরিক এক যৌথ বিবৃতিতে সরকার ও সকল ক্যাডারদের সাময়িক স্বার্থের পেছনে না ছুটে জাতীয় স্বার্থে আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে প্রকাশিত এই বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘কীভাবে জাতি সংস্কারের সুফল ভোগ করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনায় অবদান রাখার এটাই উপযুক্ত সময়।’

বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের লোগো

প্রশাসনিক ক্যাডার কর্মীদের ‘সংস্কারবিরোধী কর্মকাণ্ডের’ পরিপ্রেক্ষিতে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক’ হিসেবে তারা এই বিবৃতি জারি করেছেন। তাদের মতে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে সংস্কারে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ‘তাদের কর্মকাণ্ড ফ্যাসিবাদী আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পতিত সরকার জাতির ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য প্রশাসনিক ক্যাডারদের অভূতপূর্ব ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল,’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

জাতি যখন সংস্কারকে সমর্থন করছে, তখন প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছেন। ‘আমরা, স্বাক্ষরকারী উদ্বিগ্ন নাগরিকরা, এর প্রতিবাদ জানাই। দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে, আমাদের ক্যাডাররা ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধার জন্য জাতিকে জিম্মি করে রেখেছে," বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্বাক্ষরকারীদের মতে, ১৯৯৬ সালের জনতার মঞ্চ এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের অবৈধ নির্বাচনের কারিগর এই ক্যাডাররাই। একটি শ্বেতপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে তারা বলেন, দুর্নীতিতে আমাদের আমলাদের স্থান প্রথম এবং বেগম পাড়ায় বাড়ি নির্মাণেও তারা সর্বাগ্রে।

‘এখনই সময় বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং স্বার্থপর কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটানোর। এই সরকার কাউকে জবাবদিহি করেনি এবং অনেককে অন্যায়ভাবে পদোন্নতি দিয়ে বঞ্চিতদের তালিকায় ফেলেছে,’ তারা বলেন। শাস্তির অভাব ক্যাডারদের সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার সাহস জুগিয়েছে, যা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ধারা ৩০ এর লঙ্ঘন।

তারা বলেন, আইন অনুসারে তারা যে কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য। সরকারে স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য জবাবদিহিতার নীতি মেনে চলতে হবে। ‘আমরা সরকারকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী কোনো অব্যাহতি ছাড়াই এই বিষয়টি তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ সচিবালয়ে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে দুর্নীতি সংক্রান্ত নথিপত্র ধ্বংসের তদন্তও দাবি করেন তারা।

‘ক্যাডার’ নামে পরিচিত অভিজাত শ্রেণি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য স্থায়ী করে, বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার এবং দেশের নাগরিকদের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করছেন স্বাক্ষরকারীরা। ‘জুলাই বিপ্লবের বিরোধিতাকারী বাংলাদেশ প্রশাসনিক সেবা সমিতি নতুন বাংলাদেশে তাদের দুষ্টুমি চালিয়ে যেতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে,’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এই দেশের টিকে থাকার জন্য ন্যায়বিচারের নীতিতে ভিত্তি করে আধুনিক জনপ্রশাসন ব্যবস্থা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সংস্কার অপরিহার্য বলে তারা মনে করেন।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক ও টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুমি আহমেদ খান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদুর রহমান, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও ব্লগার-অ্যাক্টিভিস্ট ইমতিয়াজ মির্জা, রাজনীতি বিজ্ঞানী শফিকুর রহমান, ব্যবসায়ী সাদিক মাহমুদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও লেখক-অ্যাক্টিভিস্ট শাফায়াত আহমদ, প্রকৌশলী ও লেখক-অ্যাক্টিভিস্ট সুবাইল বিন আলম, প্রচারক এহতেশাম হক, অর্থনীতিবিদ ও লেখক জিয়া হাসান, ব্যবসায়ী ও অ্যাক্টিভিস্ট ফাহিম মাশরুর, সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট সাদিক মাহবুব ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ও লেখক জ্যোতি রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ রুশাদ ফরিদি, সমাজকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট রন্তি চৌধুরী, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট ড. মো. খান সোবায়েল বিন রফিক, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও মানবাধিকার কর্মী মাহমুদুল খান আপেল, রাজনৈতিক কর্মী ও জননীতি বিশেষজ্ঞ দিলশানা পারুল, গ্লোবাল হেলথ পলিসি ও সিস্টেমস গবেষক তৌফিক জোয়ার্দার, স্থপতি ও টেকসই ডিজাইনার মারজিয়া মিথিলা, অধ্যাপক ও লেখক ড. মো. আদনান আরিফ সালিম, ব্যাংকার কাজী তানভীর আহমেদ, মর্টগেজ উপদেষ্টা মুনতাসির মামুন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. সাইফুল হোসেন, জননীতি বিশেষজ্ঞ আসিফ ইকবাল, গবেষক ও পিএইচডি শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল রিয়াদ, রাজনৈতিক কর্মী ও লেখক খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম, রাজনৈতিক কর্মী ও অর্থনৈতিক গবেষণা উৎসাহী হুমায়ুন কবির, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুরশিদ শালিন, চিকিৎসক ডা. শাকিল আহমেদ, চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ খালেদ হাসান, আর্থিক বিশ্লেষক তৌকির আজিজ, আইনজীবী এহতেশামুল হক, উদ্যোক্তা জিয়া হাসান সিদ্দিক, রেল প্রকৌশলী উল্লাস জায়েদ, প্রধান প্রকৌশলী ফোকরুল ইসলাম সেলিম, সলিউশন ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ সারওয়ার রশিদ, অপারেশনস ম্যানেজার শেখ মোহাম্মদ জিলানী, অ্যাক্টিভিস্ট, ব্যঙ্গ রচয়িতা ও আইন প্রয়োগকারী পেশাজীবী মো. রাশেদ, হেজ ফান্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আসাদুল ইসলাম, পরিবহন প্রকৌশলী সাবিন রহমান, সাংবাদিক শায়ান খান, আর্থিক বিশ্লেষক আসিফ খান, ব্যবসায়ী রিদওয়ান আনাম, পোস্টডক্টরাল সহযোগী ইসলামুল হক, চিকিৎসক ড. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ব্যারিস্টার ও চার্টার্ড সার্টিফাইড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মুস্তাক আহমেদ, ডেটা ইঞ্জিনিয়ার ও মানবাধিকার রক্ষাকারী রূপম রাজ্জাক এবং সমাজ উদ্যোক্তা আশরাফুল হাসান।