আসিফ নজরুলের প্রতিশ্রুতি, বিজয় দিবসের আগেই বিচার সম্পন্ন হবে

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আগামী বিজয় দিবসের আগেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক সংঘটিত সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্য সম্পন্ন করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ড. আসিফ নজরুল

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষ করে আমরা আগামী বিজয় দিবস উদযাপন করব।’

আজ ঢাকার খামারবাড়ীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ ২০২৪-এর দ্বিতীয় দিনের উদ্বোধনী অধিবেশনে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক সংঘটিত সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডসহ সকল অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার। দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাদের কঠিন সময় পার করতে হয়েছে, কারণ দায়িত্বশীলরা কাজ করছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো প্রসিকিউটর ছিল না, আমাদের নতুন প্রসিকিউটর নিয়োগ করতে হয়েছে এবং পুরো ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করতে হয়েছে। আমাদের পুরো দল সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের জন্য সম্পূর্ণভাবে কাজ করছে। আমি আশা করি, আগামী বছরের মধ্যেই আমরা প্রধান বিচারিক বিষয়গুলোর বিচার সম্পন্ন করতে পারব।’

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, জুলাই হত্যাকাণ্ড এবং সমগ্র শাসনামলে বলপূর্বক গুমসহ কমপক্ষে চারটি বড় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে।

পিলখানা হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরপরাধী (তৎকালীন বিডিআর) জওয়ানদের জেল থেকে মুক্তি দিতে কোনো বাধা নেই।’

সাইবার নিরাপত্তা আইনে সংস্কার আনার বিষয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুরো আইনটি বাতিল করা ভালো সিদ্ধান্ত হবে না, কারণ ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা ডিজিটাল অপরাধ সারা বিশ্বে স্বীকৃত।’

তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাকিং, ডিজিটাল জালিয়াতি বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অর্থ পাচারের মতো ডিজিটাল অপরাধ প্রতিরোধের জন্য আমাদের কিছু নিয়মকানুনের প্রয়োজন। তবে আইনের কিছু ধারায় সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন।’

উপদেষ্টা সকলকে ভালোবাসার সাথে সরকারের সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসা এবং সম্মান ছাড়া আমাদের কিছুই নেই। জনগণের কাছে আমাদের অনুরোধ, ভালোবাসার সাথে আমাদের কাজের সমালোচনা করুন। আমরা সকল ইতিবাচক সমালোচনা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন সমগ্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা পতনের মুখে ছিল তখন আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই কারণে আমরা এমন একটি কঠিন সময় পার করছি যা এ দেশে আগে কেউ দেখেনি।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে বিচারিক প্রক্রিয়ার মান বজায় রাখার বিষয়টি আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি, যাতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় কারো আঙ্গুল উঠাতে না পারে। যারা রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হবে।’

প্রান্তিক জনগণের বিচার নিশ্চিত করতে পারবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল লক্ষ্য হল অপরাধের শীর্ষ নেতাদের বিচার করা। প্রান্তিক জনগণের বিচার নিশ্চিত করতে  আমাদের জন্য কঠিন।

মনির হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মাধ্যম ও প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, বলপূর্বক গুমের শিকার দিদারুল ভূঁইয়া, মায়ের ডাকের আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের মহাসচিব জাহিদুল ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহিদ আহসান।