ফ্রান্সে নতুন সরকার, সামনে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ

ছুটির মৌসুমের ঠিক আগেই ফ্রান্সে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং নব-নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেরু-এর সামনে এখন চ্যালেঞ্জের পাহাড়।

প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং নব-নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেরু

প্রচণ্ড ঋণ, জাতীয়তাবাদী উগ্র ডানপন্থীদের ক্রমবর্ধমান চাপ, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ— ২০২৪ সালটাই ইতোমধ্যেই অস্থির, তার উপর এই নতুন সরকারের সামনে আরও কঠিন বাস্তবতা অপেক্ষা করছে।

অর্থনৈতিক সংকট প্রকট:

ফরাসি অর্থনীতির সবচেয়ে জরুরি সমস্যা হলো ২০২৫ সালের বাজেট পাস। আর্থিক বাজার, রেটিং সংস্থা এবং ইউরোপীয় কমিশন ইইউ’র নিয়ম মেনে ঘাটতি কমানোর জন্য ফ্রান্সের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। ফ্রান্সের ঋণ বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের ১১২%। কোভিড-১৯ লকডাউন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এই ঋণের বোঝা আরও বেড়েছে।

পূর্ববর্তী সরকারের পতনের অন্যতম কারণ ছিল ২০২৫ সালের প্রাথমিক বাজেট পরিকল্পনায় ৬০ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় কর্তন এবং কর বৃদ্ধির প্রস্তাব। নতুন অর্থমন্ত্রী এরিক লম্বার্ড কিছু প্রতিশ্রুতি পুনর্বিবেচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি কঠিন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিপজ্জনক, আর অর্থনৈতিক অবস্থা ভঙ্গুর,’ তিনি স্বীকার করেছেন।

সরকারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত:

গত এক বছরে এটি ফ্রান্সের চতুর্থ সরকার। কোন দলেরই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। ম্যাক্রোঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মেরিন লে পেন পূর্ববর্তী সরকারের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বামপন্থী দলগুলোও নতুন মন্ত্রিসভায় প্রভাব আশা করেছিল, কিন্তু ব্যয় কর্তন শ্রমজীবী পরিবার এবং ছোট ব্যবসাগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে তারা আশঙ্কা করছে। নতুন করে অবিশ্বাসের ভোটের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ফরাসি সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন:

গত এক বছরে ফ্রান্সে এটি চতুর্থ সরকার। কোনো দলেরই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। মধ্য-ডান এবং মধ্য-বামপন্থী আইনপ্রণেতাদের সমর্থনে নতুন মন্ত্রিসভা কোনরকমে টিকে আছে। এই সরকার কতদিন টিকবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

ম্যাক্রোঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মেরিন লে পেন বামপন্থীদের সঙ্গে অবিশ্বাসের ভোটে যোগ দিয়ে পূর্ববর্তী সরকারের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। লে পেন এখনও রাজনীতিতে শক্তিশালী। বামপন্থী দলগুলো নতুন মন্ত্রিসভায় আরও প্রভাব আশা করেছিল, কিন্তু প্রতিশ্রুত ব্যয় কর্তন শ্রমজীবী পরিবার এবং ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে তারা মনে করছে। নতুন করে অবিশ্বাসের ভোটের সম্ভাবনা নেই বলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ম্যাক্রোঁ ২০২৭ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে, তার পদত্যাগের চাপ বাড়তে পারে। লে পেনের ন্যাশনাল র‍্যালি ম্যাক্রোঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বদ্ধপরিকর। তবে লে পেন নিজেও আইনি সমস্যায় জর্জরিত।

ফ্রান্সের নতুন সরকারের সামনে অর্থনৈতিক সংকটের বাইরেও কঠিন সব বাস্তবতা অপেক্ষা করছে।

অভিবাসন: ন্যাশনাল র‍্যালি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রিটেইল কঠোর অভিবাসন নীতি চাইলেও, প্রধানমন্ত্রী বেরু বিদ্যমান আইন কার্যকরের উপর জোর দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, "প্রচুর অভিবাসন আইন আছে, কিন্তু কোনটিই প্রয়োগ করা হচ্ছে না।" এই বক্তব্য রক্ষণশীলদের সমালোচনার মুখে পড়েছে।

সামরিক ব্যয়: ইউরোপীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে সামরিক ব্যয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকর্নু ফ্রান্সের বিরুদ্ধে "জমে থাকা হুমকি" মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।

মায়োট: ঘূর্ণিঝড়-বিধ্বস্ত মায়োটের পুনর্গঠন দ্রুততর করতে ম্যাক্রোঁ জানুয়ারিতে একটি জরুরি আইন চাইবেন। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছে।

নিউ ক্যালিডোনিয়া: এই ফরাসি অঞ্চলের সরকার স্বাধীনতা-পন্থীদের পদত্যাগের কারণে পতন ঘটেছে। এটি নতুন বিদেশ মন্ত্রী ম্যানুয়েল ভ্যালসের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।