কেরানীগঞ্জে ব্যাংক ডাকাতি: পুলিশকে ফোন দিয়েছিল ডাকাতরাই!

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ঢুকে ডাকাতির চেষ্টা করেছিল তিন যুবক। তবে এ খবর বাইরে জানাজানি হয়ে গেলে জনগণের গণপিটুনি থেকে বাঁচতে আসামিদের একজনই পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তিন আসামি আত্মসমর্পণ করেন এবং তাদের কাছ থেকে লুট করা ১৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখা

গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ঢুকে খেলনা পিস্তলের ভয় দেখিয়ে গ্রাহক ও কর্মচারীদের জিম্মি করে এই ডাকাতির চেষ্টা চালানো হয়। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীসহ উপস্থিত সবাইকে এক জায়গায় বসিয়ে রাখে ডাকাতরা। তারা ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরার তার কেটে ফেলে এবং সার্ভারের হাব ভেঙে দেয়। ব্যাংকের ক্যাশ থেকে ১৮ লাখ টাকা লুট করে পালানোর চেষ্টার এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের আটক করে।

ডাকাতি ঘটনায় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার তারেক মামুন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানায় একটি মামলা করেন। পরদিন পুলিশ তিন আসামি লিয়ন, আরাফাত ও সিফাতকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে।

তাদের মধ্যে আরাফাত ও সিফাত ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক হিরন কুমার বিশ্বাস। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদ।

আরাফাত ও সিফাত স্বীকারোক্তিতে জানায়, ব্যাংকে ডাকাতি করার প্রস্তাব দেয় লিয়ন। প্রথমে রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত লিয়নের চাপ ও প্রলোভনে রাজি হয় তারা। লিয়ন তাদের পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রথমে তারা কদমতলীর একটি ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা করলেও পরে সেটা পাল্টে জিনজিরার রূপালী ব্যাংককে টার্গেট করা হয়।

ডাকাতির সময় বাইরে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে ভয় পেয়ে যায় তিন আসামি। প্রথমে তারা পুলিশ বা কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে মানা করেন। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জনতার উত্তেজনা ও গণপিটুনির ভয়ে আসামি লিয়ন নিজেই পুলিশকে ফোন করে। পরে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে আসার সময় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় লিয়নের ব্যাগ থেকে ১৫ লাখ টাকা, পকেট থেকে দুই লাখ টাকা এবং আরাফাতের পকেট থেকে এক লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

জবানবন্দিতে সিয়াম আরও জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী লিয়ন ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করেই খেলনা পিস্তল দিয়ে সবাইকে ভয় দেখায়। তিনি ও আরাফাত ব্যাংকের অন্যদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। তবে সেখানে কাউকে কোনো আঘাত করা হয়নি। এ ঘটনায় মামলার তদন্ত চলছে।

স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর আরাফাত ও সিফাতকে গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। অন্যদিকে তদন্তের স্বার্থে মূল আসামি লিয়নের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।