বাংলাওয়াশ উইন্ডিজ, টাইগারদের পা মাটিতেই

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষ হয়েছে ১-১ ড্রয়ে। ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে টাইগাররা। উইন্ডিজকে (৩-০) বাংলাওয়াশ করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। আজ শুক্রবার সেন্ট ভিনসেন্টে শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের ৮০ রানের বিরাট ব্যবধানে হারিয়েছে লিটন দাসের দল।

সিরিজ জয়ের পর ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশের ফটোসেশন। আজ সেন্ট ভিনসেন্টে। ছবি: ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সাত উইকেটে ১৮৯ রানের শক্তিশালী সংগ্রহ তোলে বাংলাদেশ। সেন্ট  ভিনসেন্টে এটাই কোনো দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ক্যারিবীয় অঞ্চলেও এটা টাইগারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। জবাবে ম্যাচের ২০ বল বাকি থাকতে ১০৯ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন জাকির আলি অনিক। বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের নায়ক তিনি।

৪১ বলে তিন চার ছয় ছক্কায় ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন জাকের। তিনিই হয়েছেন ম্যাচ সেরা। ২১ বলে ২৯ রানে ফেরেন পারভেজ হোসেন ইমন। এ ছাড়া মেহেদি হাসান মিরাজ ২৩ বলে ২৯ ও তানজিম হাসান সাকিব ১২ বলে ১৭ রানে আউট হন। যথারীতি এই ম্যাচেও ব্যর্থ বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটন দাস। ১৩ বলে স্রেফ ১৪ রান করেছেন এই ওপেনার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে দুই উইকেট নেন রোমারিও শেফার্ড। পরে ব্যাট হাতেও আলো ছড়িয়েছেন তিনি। দলের সর্বোচ্চ স্কোরার শেফার্ড; ২৭ বলে ৩৩ রান করেন তিনি। এ ছাড়া জনসন চার্লস ১৮ বলে ২৩, নিকোলাস পুরান ১০ বলে ১৫ ও গুডাকেশ মোতি ১২ বলে ১২ রানে আউট হন। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল রিশাদ হোসেন; নেন তিন উইকেট।

দুটি করে শিকার তাসকিন আহমেদ ও শেখ মেহেদি হাসানের। একটি করে উইকেট পান সাকিব ও হাসান মাহমুদ। এই ম্যাচে সুবিধা করতে না পারলেও সিরিজ সেরা হয়েছেন শেখ মাহেদি। সবমিলিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এক যুগ পর বিদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডকে তাদের মাটিতে এবং গত বছর ইংল্যান্ডকে দেশের মাটিতে ধবলধোলাই করেছিল বাংলাদেশ।

সেসব স্মৃতি আজ ক্যারিবীয়ান অঞ্চলে ফিরিয়ে এনেছে টাইগাররা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সিরিজটি বাংলাদেশ খেলেছে নিয়মিত অধিনায়কসহ মূল একাদশের কয়েকজন ছাড়াই। স্বভাবতই খুশি অধিনায়ক লিটন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে আমরা সত্যিই ভালো খেলেছি। ওয়ানডে সংস্করণেও। দুর্ভাগ্যবশত আমরা জিততে পারিনি। তবে আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল। ভালো রান করতে পারলে আমরা খুব ভালো বোলিং করতে পারি।’

লিটন যোগ করেন, ‘কোচ (ফিল সিমন্স) কখনও আমাদের চাপে দেননি। পুরো সফরে আমরা নির্ভার ক্রিকেট খেলেছি। শুধু কোচিং বিভাগ নয়, আমাদের ম্যানেজমেন্টও খুব সহায়তা করেছে। আমরা প্রতিদিন উন্নতি করছি। এই উইকেট ব্যাটিং বান্ধব ছিল। তবু আমাদের বোলাররা যেভাবে পারফর্ম করেছেন সেটি ছিল বিস্ময়কর। এটা বড় একটা অর্জন। আমরা খুব খুশি।’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলে থেকেও একাদশে সুযোগ পাননি শেখ মাহেদি। তিনিই সিরিজ জয়ের অন্যতম নায়ক। শেখ মাহেদি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের সময় আমাদের অনেক অপশন ছিল। এ কারণে আমি খেলিনি। তবে গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। যা এখানে কাজে লেগেছে। আমাদের সামনে বড় পরীক্ষা আছে। ছন্দ ধরে রাখতে হবে।’

বাংলাদেশের পরবর্তী মিশন আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। সেটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। যা ওয়ানডে সংস্করণে অনুষ্ঠিত হবে। এই সংস্করণেই উইন্ডিজের কাছে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হেরেছে দল। তবে ওয়ানডে সিরিজ খারাপ কাটলেও আশাবাদী শেখ মাহেদি, ‘ওয়ানডে সিরিজ আমাদের ভালো কাটেনি। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজে আমরা জয়ের জন্য মুখিয়ে ছিলাম। আশা করছি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আমরা ভালো করব।’

টি-টোয়েন্টি সিরিজে সবচেয়ে ধারাবাহিক ছিলেন জাকের আলি। আজ শেষ ম্যাচেও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেছেন তিনি। জাকের আলি বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে এই সিরিজটা আমরা জন্য চমৎকার ছিল। আগের দুটির চেয়ে এই ম্যাচের উইকেট আলাদা ছিল। বিশ্বাস ছিল রান পাব।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ১৮৯/৭ (২০ ওভার)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১০৯/১০ (১৬.৪ ওভার)।
ফল: বাংলাদেশ ৮০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: জাকের আলি অনিক (বাংলাদেশ)।
সিরিজ সেরা: শেখ মাহেদি হাসান (বাংলাদেশ)।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।