ইউনূস-শরিফ বৈঠকে ১৯৭১-এর প্রসঙ্গ: স্থায়ী সমাধানের আহ্বান

মিশরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়সমূহের স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। ‘এই বিষয়গুলো বারবার উত্থাপিত হচ্ছে। আসুন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এগুলোর একটা স্থায়ী সমাধান করি,’ বলেন ইউনূস।

বৈঠকের ছবি

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই বিষয়গুলো একবারের জন্য মীমাংসা করা ভালো হবে।’

শাহবাজ শরিফ জানান, ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে অন্যান্য কোন অমীমাংসিত বিষয় থাকলে তিনি সেগুলো পর্যালোচনা করতে ইচ্ছুক।

দুই নেতা বাণিজ্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। চিনি শিল্প এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা বৃদ্ধির আগ্রহও প্রকাশ করেন তারা। সার্ক পুনরুজ্জীবনের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।

অধ্যাপক ইউনূস ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের আগে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার’ বাস্তবায়নের বিষয়ে তার সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। সংস্কারের বিষয়ে সংলাপের জন্য একটি ঐকমত্য-গঠন কমিশন পরিচালনা করছেন বলেও তিনি জানান।

শাহবাজ শরিফ ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য অপেক্ষা করছি।’

সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য অধ্যাপক ইউনূসের উদ্যোগের প্রশংসা করে শরিফ এই আঞ্চলিক সংস্থার একটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের ব্যাপারে বাংলাদেশকে আহ্বান জানান।

‘এটি একটি অগ্রাধিকার,’ ইউনূস শরিফকে বলেন। ‘আমি সার্কের ধারণার একজন বড় ভক্ত। আমি এই বিষয়টিতে জোর দিয়ে যাচ্ছি। আমি সার্ক নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলন চাই, এমনকি এটি কেবল একটি ছবি তোলার অধিবেশন হলেও, কারণ এটি একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করবে,’ তিনি বলেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোর উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব নিয়ে শোক প্রকাশ করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে ঢাকা উপকৃত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

এক দশক আগে পাঞ্জাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পাকিস্তানের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শরিফ বলেন, তারা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে পারে।

ইউনূস এই সমর্থনকে স্বাগত জানান।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশহাক দার এবং অধ্যাপক ইউনূসের বিশেষ দূত লুৎফি সিদ্দিকী।

সিদ্দিকী ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া সফরের পথে বাংলাদেশ সফরের জন্য পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দারকে আমন্ত্রণ জানান, যা তিনি গ্রহণ করেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শরিফ অধ্যাপক ইউনূসকে তার সুবিধামতো সময়ে তাদের দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।