কে এই মওলানা সা’দ, তাকে নিয়ে বিতর্কের নেপথ্যে কী?
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
প্রায় এক শতাব্দীকালের ইতিহাসে তাবলীগ জামাত এখন বৃহত্তম সংকটের মুখোমুখি। আমীর পদের উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধই এই সংকটের মূল কারণ। ১৯৯৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত প্রথম সাত দশকে তিনজন আমীর তাবলীগ জামাতের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তারা সকলেই নিজামুদ্দিন মারকাজের (দিল্লির প্রধান কার্যালয়) সদস্য এবং পারিবারিকভাবে (রক্তের অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে) একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন।
তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি ছিলেন এর প্রথম আমীর। দেওবন্দ আন্দোলনের একজন সদস্য হিসেবে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে শিক্ষালাভ করেন এবং মাজাহির উলুম, সাহারানপুরে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে শিক্ষকতা ত্যাগ করে তিনি নিজামুদ্দিনে চলে যান। ১৯২৬/২৭ সালে সেখানে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তাবলীগ জামাত প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৪৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আমীর ছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র মুহাম্মদ ইউসুফ কান্ধলভি আমীর নিযুক্ত হন। মৃত্যুর পূর্বে মুহাম্মদ ইলিয়াস ছয়জন ‘মনোনীত ব্যক্তির’ একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন। এই তালিকা থেকে একটি শুরা (পরিষদ) তার পুত্রকে নতুন আমীর হিসেবে নির্বাচিত করে।
পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ মুহাম্মদ ইউসুফ পরবর্তী ২১ বছর তাবলীগ জামাতকে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করতে কাজ করেছেন। ১৯৬৫ সালে ৪৮ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।
মওলানা ইলিয়াসের মনোনীত ছয় ব্যক্তির একজন ছিলেন মওলানা ইনামুল হাসান। মওলানা ইউসুফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তিনি দ্বিতীয় আমীরের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। মওলানা ইউসুফের আমীর পদে থাকাকালীন তিনি তার সহায়ক হিসেবে কাজ করেছিলেন। মওলানা ইউসুফের একজন চাচাতো বোনকে বিয়ে করে তিনি পরিবারের সদস্য হয়েছিলেন। তার জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, চরিত্র এবং বিচারবুদ্ধির জন্য তিনি ব্যাপক সমাদৃত ছিলেন।
মওলানা ইউসুফের মৃত্যুর পর তাকে তৃতীয় আমীর হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৯৫ সালে ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ৩০ বছরের বেশি সময় নেতৃত্ব দেন।
১৯৯৫ সালে মওলানা ইনামুল হাসানের মৃত্যুর পর তাবলীগ জামাতের নেতৃত্বে এক অস্থিরতা দেখা দেয়। উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ এই অস্থিরতার প্রধান কারণ। ১৯৪৪ এবং ১৯৬৫ সালে উত্তরাধিকার নির্ধারণ সহজ ছিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালে নিজামুদ্দিনে কোন স্পষ্ট উত্তরাধিকারী ছিলেন না। মওলানা ইনামুল হাসানের জীবদ্দশায় গঠিত একটি শুরা (পরিষদ) তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনা করত। এই শুরা সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করত।
কালক্রমে শুরার সদস্যরা মারা যান এবং তাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়নি। শুরার দুই জন প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন মওলানা সা’দ কান্ধলভি (মওলানা ইউসুফের নাতি এবং মওলানা ইলিয়াসের পরনাতি) এবং মওলানা জুবায়েরুল হাসান (মওলানা ইনামুল হাসানের পুত্র)। ২০১৪ সালের শুরুতে তারাই শুরার একমাত্র জীবিত সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে বিরোধ উদ্ভব হলে তাবলীগ জামাত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
২০১৪ সালের মার্চ মাসে মওলানা জুবায়েরুল হাসানের মৃত্যু হয়। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আমীর হিসেবে নিযুক্ত হননি, কিন্তু ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি তাবলীগ জামাতের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এরপর মওলানা সা’দ নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং নিজেকে আমীর ঘোষণা করেন, যা বহু তাবলীগ অনুসারীর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না।
অনেকে মনে করেন মওলানা সা’দের প্রয়োজনীয় ‘তারবিয়াহ’ বা ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এক মাশওয়ারায় (পরামর্শমূলক বৈঠক) মওলানা সা’দ নিজেকে ‘সকলের আমীর’ বলে ঘোষণা করেন এবং ব্যক্ত করেন যারা তাকে আমীর মানতে রাজি নয়, তারা জাহান্নামে যাবে। এই ঘটনা তাবলীগ জামাতের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে।
২০১৫ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের রাইবিন্দ ইজতেমায় বিশ্ব শুরা পুনর্গঠিত হয় এবং ১৩ সদস্যের একটি পরিষদ গঠন করা হয়। এই শুরা আমীর পদের বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধুমাত্র শুরা ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যক্রম চালানোর ওপর জোর দেয়। মওলানা সা’দ এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে দলিলে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। এরপর থেকেই তার নেতৃত্ব আরও বিতর্কিত হয়ে ওঠে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দারুল উলুম দেওবন্দ একটি ফতোয়া জারি করে মওলানা সা’দের নেতৃত্বকে বিচ্যুত এবং বিভাজনকারী বলে অভিহিত করে। ফতোয়ায় বলা হয় যে মওলানা সা’দ জ্ঞানের অভাবে ওলামাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন এবং তার কুরআন-হাদীসের ব্যাখ্যা ভুল।
২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার মওলানা সা’দ কান্ধলভিকে টঙ্গীর ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করে আসছে। ফলে ২০১৮ সাল থেকে টঙ্গীর ইজতেমা দুই ভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একটি মওলানা সা’দ কান্ধলভির অনুসারীদের, অন্যটি শুরার অনুসারীদের। শুরার অনুসারীদের ইজতেমার আখেরি মোনাজাত প্রায়শই পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের প্রাক্তন ইমাম, জ্যেষ্ঠ আলেম মওলানা জুবায়ের আহমেদ (প্রয়াত জুবায়েরুল হাসান নন)।
মওলানা সা’দের অনুসারী এবং মওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এখানে মওলানা জুবায়েরের অনুসারী বলতে বিশ্বব্যাপী শুরার অনুসারীদের বোঝানো হয়। মওলানা জুবায়ের ১১ সদস্যের শুরা পরিষদে বাংলাদেশের দুই প্রতিনিধির একজন, যেখানে মওলানা সা’দ আর শুরার অংশ নন।
বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাকরাইল মসজিদকে কেন্দ্র করে তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত হচ্ছে। প্রয়াত আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে তাবলীগ জামাত বিশ্ব শুরার ধারণাকে সমর্থন করে আসছিল। তার মৃত্যুর পরও বাংলাদেশে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.