ধ্বংসস্তূপ থেকে নবজীবনের স্পন্দন, ফিরছে মারেত আল-নুমানের প্রাণ

যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন এখনও মারেত আল-নুমানের দেয়ালে, ছেঁড়া পিচের রাস্তায়। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ঘাস। এই ধ্বংসের মাঝেই নতুন করে প্রাণের স্পন্দন। একসময়ের প্রাণবন্ত শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও আবার ফিরছেন তার পুরোনো বাসিন্দারা। শুরু হয়েছে পুনর্নির্মাণের কাজ।

যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত মারেত আল-নুমান

বিলাল আল-রিহানি, এই শহরেরই একজন পুরোনো বাসিন্দা। স্ত্রী এবং ১৪ বছরের ছেলেকে নিয়ে ফিরে এসেছেন তার পুরোনো আবাসে। পশ্চিমাঞ্চলের এই শহরে আবারও খুলেছেন নিজের পেস্ট্রির দোকান। তৈরি করছেন তাদের পরিবারের ১৫০ বছরের পুরনো বিশেষ দারচিনি পেস্ট্রি। বিদ্যুৎ ও পানির সংকটের মধ্যেও চলছে কাজ। দোকানে ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়ছে। শরণার্থী শিবিরের চেয়ে এখানে ব্যবসা ভালো বলে জানালেন বিলাল।

যুদ্ধ শুরুর আগে প্রায় এক লাখ মানুষের বাসস্থান ছিল মারেত আল-নুমানে। সংঘাতের জেরে পরিত্যক্ত ভূতুড়ে শহরে পরিণত হয় এটি। সিরিয়ার ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীকে পরিণত হয় একসময়ের প্রাণবন্ত শহর।

কৌশলগত এম৫ হাইওয়ের পাশে অবস্থিত এই শহরটি আলেপ্পো ও দামেস্কের সংযোগ সড়কে অবস্থিত। ২০১২ সালে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই এটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। ২০১৭ সালে হায়াত তাহরির আল-শাম শহরটি দখল করে নেয়। ২০২০ সালে বাশার আল-আসাদের বাহিনী রুশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় হামলা চালিয়ে শহরটি পুনর্দখল করে। তখন শেষ বাসিন্দারাও শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।

যুদ্ধের পর লোকজন ফিরে আসতে শুরু করলেও শহরটি মাইন ও অবিস্ফোরিত বোমায় ভরা। যা তাদের স্বাভাবিক পুনর্বাসনের পথে বড় বাধা। স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকারী দল হোয়াইট হেলমেটস ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার ও মরদেহ উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে পরিষ্কার করা হচ্ছে রাস্তাঘাট।

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা জিহাদ শাহিন বলেন, শহর আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাচ্ছে। শহরের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আগের চেয়েও ভালোভাবে এটি পুনর্নির্মাণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে স্থানীয় কর্মকর্তা কিফাহ জাফর বলেন, এখন শহরটির যে অবস্থা, তাতে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ নয়। কোনো স্কুল নেই, মৌলিক পরিষেবারও অভাব রয়েছে। তারপরও যতটা সম্ভব সহায়তা করা হচ্ছে।

শহরের এক প্রান্তে ইহাব আল-সাইয়িদ তার পরিবারের ভেঙে পড়া বাড়ি মেরামত করছেন। ২০১৭ সালে রুশ বিমান হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। বাশার আল আসাদ পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি আবার নিজের আবাসস্থলে ফিরে এসেছেন। পরিবার নিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চান তিনি। তিনি বলেন, "আমাদের শুধু নিরাপত্তা চাই। তাহলেই আমরা আবার নতুনভাবে সবকিছু গড়ে তুলতে পারব।"

যুদ্ধের তীব্র ক্ষতি সত্ত্বেও মারেত আল-নুমানের বাসিন্দারা নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করছেন, নতুন জীবন শুরু করছেন। তাদের আশা, বিগত দিনের দুঃখ ভুলে শহরটি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। বাশার আল আসাদকে সরিয়ে দিতে পেরেছেন, এটিই তাদের বড় সাহস জোগায়।

আরব নিউজ অবলম্বনে