তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পথ সুগম

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী মূল কাঠামো পরিপন্থী এবং গণতান্ত্রিক মূলনীতির পরিপন্থী বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার এই রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পথ সুগম হলো।

হাইকোর্টের ছবি

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পঞ্চদশ সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণা করেন।

আদালতের মতে, পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণরূপে বাতিল না হলেও, এটি সংবিধানের মূল কাঠামোকে দুর্বল করেছে।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, সংবিধানের মূল কথা হলো গণতন্ত্র, যা কেবল অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা সম্ভব। রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের মূল কাঠামোর অপরিহার্য অঙ্গ ছিল।

‘সংবিধানের সৌন্দর্য হলো জনগণকে ক্ষমতায়ন করা। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস,’ রায়ে বলা হয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সংরক্ষণের জন্য একটি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছে আদালত।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ব্যাহত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। নিরপেক্ষ নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এই ব্যবস্থা প্রণীত হয়েছিল। ‘রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল এবং তা সংবিধানের ভিত্তির একটি মৌলিক অংশ হয়ে উঠেছে।’

২৩ কার্যদিবসের ব্যাপক শুনানির পর এই রায় ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এমডি আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমডি আসাদ উদ্দিন। আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, সুজনের বদিউল আলম মজুমদার। বিএনপির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এবং ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী, ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। এছাড়াও, ব্যারিস্টার জুনাইদ আহমেদ চৌধুরী চারজন আবেদনকারীর পক্ষে এবং ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ হস্তক্ষেপকারী হিসেবে ছিলেন।

গত ৫ ডিসেম্বর দীর্ঘ শুনানির পর আদালত রায়ের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছিল।

২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন তদারকির জন্য প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

আইন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হাইকোর্টের এই রায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা ও পুনর্বহালের পথ উন্মুক্ত করেছে, যা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।