নতুন নিয়মে ইসলামি ব্যাংকিং: ব্যাংকার-বিশ্লেষকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য পৃথক নিয়মকানুন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযায়ী, প্রচলিত ব্যাংকগুলো আর সরাসরি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দিতে পারবে না। ইসলামি ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য তাদেরকে পৃথক সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘এই আইন কার্যকর হলে, প্রচলিত ব্যাংকগুলো শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা আর প্রদান করতে পারবে না।’

তবে, কিছু ব্যাংকার মনে করেন, এই পদক্ষেপ ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির পরিপন্থী। ১৯৮০-এর দশকে আইডিবির সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত চুক্তি প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং চালুর পথ প্রশস্ত করেছিল।

ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো বন্ধ করে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠার বিষয়ক নতুন নিয়ম আইডিবির ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

তিনি মনে করেন, আইডিবির ঘোষণার সঙ্গে ব্যত্যয় ঘটানোর পরিবর্তে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকগুলোতে শরিয়াহ অনুপালন এবং তহবিল ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বিশেষায়িত বিভাগ স্থাপন করতে পারে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উইন্ডো বা শাখার মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকিং পরিচালনা করা সব ব্যাংকই ভালো অবস্থানে আছে। পৃথক ব্যালেন্স শিট এবং আয় বিবরণী প্রস্তুত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ করলে এটি আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি তারা (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) সঠিকভাবে তদারকি করে, এবং শরিয়াহ বোর্ড সঠিকভাবে কার্যকর থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

তবে কিছু বিশ্লেষক ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা প্রচলিত ব্যাংকের অধীনে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের আর্থিক কার্যকারিতা স্বীকার করলেও, শরিয়াহ অনুপালন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)-এর সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন প্রশ্ন রেখেছেন, ‘প্রচলিত ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটও ইসলামি শাখার মতোই। কতটুকু শরিয়াহ ভিত্তিক এবং সঠিক?’

বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে পৃথক আইন সমর্থন করি। আমরা আসলে ব্যবসা পরিচালনার জন্য শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং করছি না; আমরা ইসলামের নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে, টাকা উপার্জনের জন্য এটি করছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেছেন, আইনটি চূড়ান্ত করার আগে সব পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও, ৩০টি প্রচলিত ব্যাংক আংশিকভাবে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। এই প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মোট ৩৩টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা এবং প্রায় ৭০০টি উইন্ডো রয়েছে, যা শরিয়াহ ভিত্তিক সেবা দিচ্ছে।