২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক সৌদি আরব

২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে সৌদি আরব। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর নেতৃত্বে অনলাইনে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে সৌদি আরবের ব্যাপক বিনিয়োগের ধারাবাহিকতায় উপসাগরীয় রাষ্ট্রটির জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।

ছবি - সংগৃহীত

সৌদি আরবের দরপত্রের বিপক্ষে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ২০০-রও বেশি সদস্য ফেডারেশন এই সিদ্ধান্তকে সর্বসম্মতভাবে সমর্থন করেছে। ‘কংগ্রেসের ভোট স্পষ্ট এবং জোরালো,’ বলেন ইনফান্তিনো। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সৌদি আরব বিশ্বমানের একটি টুর্নামেন্ট উপহার দেবে, যা বিশ্বব্যাপী প্রত্যাশা পূরণ করবে এবং ‘সামাজিক পরিবর্তন ও ঐক্যের অনুঘটক’ হিসেবে কাজ করবে।

এই ঘোষণার পাশাপাশি ২০৩০ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনাও চূড়ান্ত হয়েছে। স্পেন, পর্তুগাল এবং মরক্কো যৌথভাবে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে। টুর্নামেন্টের শতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে এবং উরুগুয়ে তিনটি ম্যাচ আয়োজন করবে।

সৌদি আরবে ১৫টি স্টেডিয়াম নির্মাণ ও সংস্কার, পরিবহন নেটওয়ার্ক এবং আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। এই সব উন্নয়ন কাজ ‘ভিশন ২০৩০’ আধুনিকীকরণ কৌশলের অংশ। প্রস্তাবিত একটি স্টেডিয়াম মাটি থেকে ৩৫০ মিটার উঁচুতে নির্মিত হবে, আর রিয়াদের কাছে আরেকটি স্টেডিয়াম ২০০ মিটার উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হবে।

ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ ‘ব্যতিক্রমী ও অভূতপূর্ব’ টুর্নামেন্ট আয়োজনের আশা প্রকাশ করে বলেছেন, বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষমতা সৌদি আরবের রয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এটিকে শ্রমিকদের, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য ‘মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্ত"’বলে অভিহিত করেছে।

‘পর্যাপ্ত মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত না করেই সৌদি আরবকে ২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়ার ফিফার উদ্দেশ্যহীন সিদ্ধান্ত অসংখ্য মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে,’ বলেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের শ্রম অধিকার ও ক্রীড়া বিভাগের প্রধান স্টিভ ককবার্ন।

সমালোচকদের মতে, সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি ফিফা সঠিকভাবে বিবেচনা করেনি। এ বছরের শুরুতে জাতিসংঘেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, ক্রীড়াঙ্গনে বিপুল অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে সৌদি আরব ‘স্পোর্টসওয়াশিং’-এর চেষ্টা করছে।

বিশ্ব ফুটবলে সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে রয়েছে স্পন্সরশিপ, ইউরোপীয় ক্লাবগুলিতে বিনিয়োগ এবং খেলোয়াড়দের জন্য মোটা অঙ্কের চুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে ফিফার সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি, যেমন রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর স্পন্সরশিপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৫ সালের ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য আর্থিক সহায়তা।