প্রধানমন্ত্রী থেকে ইউপি সদস্য, সবার জবাবদিহিতা চান তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে জবাবদিহি নিশ্চিত করা তাদের দলের মূল লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পর্যন্ত সবাইকে জনগণের কাছে তাদের কাজের জবাবদিহি করতে হবে।

তারেক রহমান

শনিবার ফরিদপুরে এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, আমরা দেশে জবাবদিহির পরিবেশ তৈরি করতে চাই। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য সকল স্তরের প্রত্যেককে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস এবং প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের কর্মকর্তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ‘আমাদের সর্বত্র জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এটি একদিনে অর্জন করা সম্ভব নয়, তবে এটি অবশ্যই সম্ভব। আপনার পরিবারের কথাই ভাবুন, জবাবদিহির কারণেই এটি সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়।’

‘৩১ দফা রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার প্রস্তাব ও জনসম্পৃক্ততা’ শীর্ষক এই কর্মশালার আয়োজন করে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটি। ফরিদপুর সদর উপজেলা কমপ্লেক্সে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

তারেক রহমান বলেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে জবাবদিহির অভাবের কারণেই দুর্নীতি, অরাজকতা, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং অন্যান্য অপকর্ম সংঘটিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বারবার একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করেছে এবং তাদের নেতা-কর্মীরা ব্যাপক লুটপাট ও বিদেশে অর্থ পাচার করেছে, কারণ তারা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়।

‘তাই আমাদের লক্ষ্য দুর্নীতি দমন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করা যাতে মানুষ সঠিক চিকিৎসা পায়। আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চাই যেখানে শিক্ষার্থীরা দেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা পেতে পারে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত হলে অনেক কিছু অর্জন করা সম্ভব,’ বলেন বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, জবাবদিহি পুনরুদ্ধার, জনগণের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া এবং বিএনপির ৩১ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অপরিহার্য। বিএনপির মতো একটি দলের সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করা স্বাভাবিক। এটি বাস্তবায়নের জন্য সকলকে ভূমিকা পালন করতে হবে।

স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার জন্য সর্বস্তরের মানুষ কীভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল স্মরণ করিয়ে দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘একইভাবে, আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

‘আমরা যদি আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে চাই, তাহলে আমার সকল নেতা-কর্মীর সহযোগিতা প্রয়োজন। এই সহযোগিতার প্রথম শর্ত হলো জনগণের আস্থা বজায় রাখা। এজন্য আমাদের জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ, কথা ও আচরণ করতে হবে,’ বলেন তিনি।

দলের কিছু নেতা-কর্মী ভুল করতে পারেন এবং তাদের সংশোধন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদের সতর্ক করতে হবে, এবং কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

জনগণের আস্থা যেকোনো রাজনৈতিক দল, তার নেতা এবং কর্মীদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের আস্থা হারালে আমরা সবকিছু হারাব। তাই আসুন আমরা এটি রক্ষা করার অঙ্গীকার করি। আমরা যদি ঘরে বসে ভাবি যে, জনগণ ইতিমধ্যেই বিএনপিকে বিশ্বাস করে, তাহলে সেই আস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে।’

জনগণের আস্থা ধরে রাখতে এবং চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তারেক রহমান দলীয় সহকর্মীদের প্রথমে নিজেদের সংশোধন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘প্রথমে নিজেদের সংশোধন করুন, তারপর অন্যদের সংশোধন করতে বলুন। অন্যথায়, (অনৈতিক কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজি বন্ধের বিষয়ে) বড় বড় কথা বলার কোনো মানে হয় না।’

দুই নেতা দলের কিছু নেতার বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজির বিষয়ে তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং জানতে চান যে, দলের কোনো নেতা-কর্মী যদি দলের প্রভাব খাটিয়ে অমানবিক, সামাজিক বিরোধী এবং চাঁদাবাজি বা অন্যান্য অপকর্মে লিপ্ত হয়, তাহলে বিএনপি কি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোনো কমিশন বা সংস্থা গঠন করবে?

প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে যদি কেউ এমন অনৈতিক কাজ করে থাকেন, তাহলে প্রথমে নিজেকে সংশোধন করুন। আমাদের দলে কিছু খারাপ লোক থাকতে পারে, যারা খারাপ ও অনৈতিক কাজ করছে। আমরা ইতিমধ্যেই তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ পেলেই তাদের দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তারেক রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হতে পারে এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বিএনপি বাংলাদেশে দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চায়, যাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান করা যায়।