জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির আহ্বান ধর্মীয় নেতাদের

দেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্ব রক্ষায় ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতারা। বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক সংলাপে তারা এই আহ্বান জানান। ভারতীয় গণমাধ্যমে সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার প্রেক্ষাপটে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের ছবি

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ধর্মীয় নেতারা। তারা বলেন, সব ধর্মের মানুষ যেন নির্ভয়ে বাংলাদেশে বসবাস করতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

রাজধানীতে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজনের প্রস্তাবও দেন তারা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘মতের ভিন্নতা থাকলেও আমরা সবাই এক পরিবার। আমরা একে অপরের শত্রু নই। আমরা সবাই বাংলাদেশি।’ জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশিদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার এমন একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে চায় যেখানে সবাই সঠিক তথ্য পেতে পারবে।

সংখ্যালঘুদের ওপর কোথাও কোনো হামলার ঘটনা ঘটলে সঠিক তথ্য সংগ্রহে ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বিদেশি গণমাধ্যমে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর প্রকাশের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মাঠের বাস্তবতার সঙ্গে বিদেশি গণমাধ্যমের খবরের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সঠিক তথ্য জানতে চাই এবং তথ্য পাওয়ার প্রক্রিয়া স্থাপন করতে চাই।’ দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি এবং ভুক্তভোগীদের জন্য দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।

বৈঠকের পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো মূল্যে ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে সরকার সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘সরকার কোনো ধরনের উগ্র কর্মকাণ্ডকে আশ্রয় বা পৃষ্ঠপোষকতা করবে না। বরং আমরা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাব।’

তিনি জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আবারও বৃহৎ পরিসরে সংলাপ করবেন প্রধান উপদেষ্টা।

মাহফুজ আলম বলেন, ‘সব দল, মত, পথ ও ধর্মের মানুষকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড় করাতে হবে এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাই আমরা ধর্মীয় নেতাদের সমর্থন চেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘তারা তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ যে গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং জাতীয় ঐক্য সুসংহত হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে জাতি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারণা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রচারণা দুই দেশের বন্ধুত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা আশা করি তারা বুঝতে পারবেন।’

বৈঠকের পর আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুফতি আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

সেন্ট মেরি’স ক্যাথিড্রালের ফাদার অ্যালবার্ট রোজারিও বলেন, ‘আমরা এখন একটি সংবেদনশীল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই সময়ে আমাদের মূল কাজ ঐক্যবদ্ধ থাকা।’

বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় বলেন, ‘আমরা বলেছি দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। আমাদের সকলকে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে হবে।’

রামনা হরিচাঁদ মন্দিরের সহকারী সম্পাদক অবিনাশ মিত্র বলেন, ‘আমরা যারা বাংলাদেশে আছি আমাদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। কিন্তু বিভাজন কোথায়? যারা বিভাজন সৃষ্টি করছে তারা বিদেশে বসে প্রচারণা চালাচ্ছে।’

গারো ধর্মযাজক জনসন মারি থামাল বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ, যারা গণমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের আমরা প্রতিহত করব। আমরা এই সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করব।’