ড. ইউনূস: মুক্ত হয়েছি, এখন বিশ্বকে জানাতে হবে আমরা এক

বাংলাদেশের সদ্য অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি কিছু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃত করার এবং গণঅভ্যুত্থানের সত্য ঘটনা চাপা দেওয়ার অভিযোগ আনেন।

ছবি - সংগৃহীত

ড. ইউনূস বলেন, অনেকেই আমাদের স্বাধীনতা পছন্দ করেন না। গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার চেষ্টা চলছে। তারা দেশের ইতিহাস বিকৃত করার, আমরা যে বাংলাদেশ গড়তে চাই, তাকে ম্লান করার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের পুরো বিশ্বকে বলতে হবে আমরা এক। আমরা যা পেয়েছি, তা একসঙ্গে অর্জন করেছি। যারা আমাদের বুকের ওপর চেপে বসেছিল, তাদের আমরা তাড়িয়ে দিয়েছি। আমরা নিজেদের মুক্ত করেছি। এটা আমাদের সবাইকে মিলে বিশ্বের সামনে দেখাতে হবে।

যারা বাংলাদেশের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করেছিল, তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা নেতিবাচক নানা কথা ছড়াচ্ছে। এগুলো বড় বড় দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। তারা গণঅভ্যুত্থান পছন্দ করে না এবং এটিকে মুছে ফেলতে চায়। তারা এতটাই শক্তিশালী যে তারা মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে।’

‘এসব ষড়যন্ত্র থেকে নিজেদের রক্ষা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এখন আমাদের বিশ্বকে দেখাতে হবে যে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সরকার বিদেশিদের এসে মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছে,’ তিনি যোগ করেন।

এদিকে বৈঠক শেষে এবি পার্টির যুগ্ম মহাসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ জানান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান প্রাথমিক বক্তব্যে এই তিনটি আলোচ্য বিষয় তুলে ধরেন।

ফুয়াদ বলেন, উল্লেখিত বিষয়গুলিতে সরকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে সকল রাজনৈতিক দল। এছাড়াও, বিদেশে পূর্ববর্তী সরকারের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তাদের প্রতিস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ভিন্নমত থাকলেও দেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ।’ তিনি আরও জানান, হাসিনা সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত সকল গোপন চুক্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলো।

এর আগে গতকাল ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তার সরকারি বাসভবনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ছাত্রনেতাদের সঙ্গে দেখা করেন।

বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রোপাগান্ডা-বিরোধী সেল গঠনের পরামর্শ দেন। আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিক উত্তেজনা, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, সাম্প্রদায়িক বিষয়, জিনিসপত্রের দাম, বাস্তব পরিস্থিতি, জনমত এবং শিক্ষা সংস্কার কমিশন নিয়ে আলোচনা করেছি।’

তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা তাদের মতামত লিপিবদ্ধ করেছেন।

বৈঠকে ড. ইউনূস ছাত্রদের বলেন, ‘তোমরাই রাষ্ট্রের অভিভাবক। এই ভূমিকা ভুলে যেও না। অনেকে এখানে আছে, অনেকে নেই। কিন্তু যারা এখানে নেই, তারাও রাষ্ট্রের অভিভাবক।’

ড. ইউনূস আগামীকাল ৫ ডিসেম্বর ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।