বাংলাদেশের ফলোঅন এড়ানোর স্বস্তি

গল টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংসের সপ্তম উইকেটে মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে মুশফিকুর রহিম ১০৬ রানের যে জুটিটি গড়লেন, এতেই প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া ফলোঅন এড়ানোর স্বস্তি পেলো বাংলাদেশ। ফলোঅনে পড়ে গেলে বড় বিপদেই পড়তে হতো বাংলাদেশকে।

বিপদে অবশ্য এখনও আছেন মুশফিকরা। সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং লিটন দাসের ব্যাটিং ব্যর্থতাই মূলত এই বিপদের মূল কারণ। ৪৯৪ রানের মতো বড় স্কোরের জবাবে যেভাবে ব্যাটিং করা দরকার, তামিম ও সৌম্য মিলে শুরুটা করেছিলেন তেমনই। কিন্তু পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা অনুসরণ করতে পারেননি তাদের।

বিশেষ করে সাকিবের কথাটাই বলতে হবে। ১৯ বলে ২৩ রান করে আউট হয়েছেন। টেস্টে যে কিছুটা ধীর-স্থির ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন, গলে সাকিব যেনো সেটা ভুলেই বসলেন। খেলতে শুরু করলেন টি-টোয়েন্টির মেজাজে। ফলাফল— আরো একবার ব্যাটিং উইকেট পেয়েও নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ফেরেন সাকিব।

সাকিবের পর মুশফিকের সঙ্গে বড় একটা জুটি গড়ে দলকে যথাসম্ভ নিরাপদে নেয়ার দায়িত্ব পড়েছিলো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কাঁধে। কিন্তু ব্যর্থ হন রিয়াদ। মাত্র আট করার পরই লাহিরু কুমারার বলে অফস্ট্যাম্প হারান তিনি। এরপর লিটন দাস এসে করে যান মাত্র পাঁচ রান।

লিটন দাসের মধ্যে মুশফিকুর রহিমের বিকল্প খোঁজার যে চেষ্টা, সেটা কতোটা সফল হতে পারে; তার একটা নমুনা বোধহয় লিটনের এমন ব্যাটিং দেখেও বোঝা যায়। ঘরোয়া ক্রিকেটের পরীক্ষিত এই পারফর্মার জাতীয় দলের হয়ে এখনো নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি সেভাবে।

টানা তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বাংলাদেশ যখন নিশ্চিত ফলোঅনের শঙ্কায় কাঁপছে, তখনই ব্যাটিং সত্তা মেলে ধরেন মেহেদি হাসান মিরাজ। অন্যপ্রান্তে তখনো দুর্দান্ত দৃঢ়তা দেখিয়ে উইকেটে আছেন মুশফিকুর রহিম। মিরাজকে নিয়ে ১০৬ রানের অলোঅন বাঁচানোর জুটিটা গড়েন বাংলাদেশের অধিনায়ক।

এ দিকে বল হাতে চার উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে ৪১ রান করেন মিরাজ। সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশ দলের সেরা অলরাউন্ডার যে তিনিই, সেটাই যেনো প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিয়েছেন অভিষেকেই বল হাতে হৈচৈ ফেলে দেয়া এই তরুণ।

দিলরুয়ান পেরেরার যে বলে মিরাজ আউট হয়েছেন, তার পরের বলে ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ। এ সময় হঠাৎ করেই যেনো কামরুল ইসলাম রাব্বিকে খুঁজে ফিরছিলো বাংলাদেশি সমর্থকরা। কারণ টেলএন্ডে নিউজিল্যান্ড ও ভারতে অনেকগুলো বল খেলে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। গলেও আজ মুশফিকের সঙ্গে তেমন কারো প্রয়োজন দেখা দিয়েছিলো।

দলীয় ৩০৮ রানে গিয়ে রঙ্গনা হেরাথের বলে আউট হন মুশফিক। ১৬১ বলে ৮৫ রান করে আউট হন বাংলাদেশের অধিনায়ক। এই ইনিংসে দারুণ একটি ছয় মারেন তিনি। সেটাও হেরাথের বলেই। পরে মুশফিককে আউট করে হেরাথ ‘প্রতিশোধও’ নিয়ে নেন!

৯৭ ওভার শেষে আলো স্বল্পতাজনিত কারণে কিছুক্ষণের জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায়। আকাশে দেখা দেয় কালো মেঘ। আউটফিল্ডের বড় একটা অংশও ঢেকে ফেলা হয়। বাংলাদেশের স্কোর তখন নয় উইকেটে ৩১২ রান। ফলোঅন এড়ানোর স্বস্তি পেলেও বাংলাদেশ আসলে গল টেস্টে এখনো অস্বস্তিতেই ভুগছে।