‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে হারেৎজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল ইসরায়েল

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে এর সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার। একই সঙ্গে পত্রিকাটিতে বিজ্ঞাপন প্রকাশ ও যেকোনো ধরনের যোগাযোগ স্থাপনে সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ইসরায়েলি পার্লামেন্টে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হারেৎজে এমন কিছু নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যা ইসরায়েল রাষ্ট্রের বৈধতা এবং আত্মরক্ষার অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশেষ করে লন্ডনে পত্রিকাটির প্রকাশক আমোস শকেনের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ‘সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন’ হিসেবে বিবেচনা করছে ইসরায়েল সরকার।

গত রোববার (২৪ নভেম্বর) হারেৎজ দাবি করে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে এই সিদ্ধান্ত সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভা বৈঠকের এজেন্ডায় ছিল না এবং কোনো আইনগত পর্যালোচনা ছাড়াই তা গৃহীত হয়েছে। হারেৎজ এটিকে ‘ইসরায়েলি গণতন্ত্রকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছে।

এক বিবৃতিতে হারেৎজ নেতানিয়াহুকে ভ্লাদিমির পুতিন, রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং ভিক্টর ওরবানের সঙ্গে তুলনা করে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অভিযোগ এনেছে। তাদের দাবি, সরকারের এই সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহুর স্বৈরাচারী শাসনেরই প্রতিচ্ছবি। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে হারেৎজ ‘সরকার-অনুমোদিত প্রচারমাধ্যমে’ পরিণত হবে না বলেও জোর দিয়েছে তারা।

হারেৎজের কলামিস্ট গিডিয়ন লেভি বলেন, সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক ও নৈতিকভাবে বিপজ্জনক বার্তা বহন করে। তিনি উল্লেখ করেন, অনেকেই হারেৎজকে ইসরায়েলের একমাত্র স্বাধীন সংবাদপত্র হিসেবে বিবেচনা করেন। বিশেষ করে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম সরকার ও সেনাবাহিনীর নির্দেশনা অনুযায়ী সংবাদ পরিবেশন করছে।

উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলের হামলার শুরু থেকেই হারেৎজের সঙ্গে সরকারের বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি লন্ডনের এক সম্মেলনে হারেৎজের প্রকাশক শকেনের ‘নেতানিয়াহুর সরকার ফিলিস্তিনিদের ওপর নিষ্ঠুর বর্ণবাদী শাসন চাপিয়ে দিয়েছে’ এবং ‘ইসরায়েলের সন্ত্রাস-বিরোধী নীতিগুলোর সমালোচনা’– এই মন্তব্য বিরোধকে আরও উসকে দেয়।

এরপর যোগাযোগ মন্ত্রী শ্লোমো কার্হি হারেৎজের বিরুদ্ধে নতুন প্রচারণা শুরু করেন এবং পত্রিকাটি বয়কটের আহ্বান জানান। গত বছরও কার্হি সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় সব কর্মচারীর হারেৎজের সব সাবস্ক্রিপশন বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে সংবাদমাধ্যমের ওপর চাপ বেড়েছে। ইসরায়েলের অভিযানে আল জাজিরার একাধিক সাংবাদিকসহ দেড় শতাধিক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হয়েছে।