ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্ব: নতুন সভ্যতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বনেতাদের ‘থ্রি জিরো’ তথা দারিদ্র্যমুক্ত, বেকারত্বমুক্ত ও কার্বন নিঃসরণমুক্ত বিশ্ব গড়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য এই তত্ত্ব একটি কার্যকর মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।

ছবি - সংগৃহীত

সম্প্রতি বাকুতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৯)-এ অধ্যাপক ইউনূস জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবেলায় ‘জিরো ওয়েস্ট’ ও ‘জিরো কার্বন’ ভিত্তিক নতুন জীবনধারা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের টিকে থাকার জন্য একটি নতুন সংস্কৃতি, একটি প্রতি-সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। এটি ‘জিরো ওয়েস্ট’ ভিত্তিক হবে, যেখানে অত্যাবশ্যকীয় চাহিদার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে কোনো অবশিষ্ট বর্জ্য ছাড়াই ভোগ করব।’

সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে লাভ-লোকসানের হিসাব না করে গড়ে ওঠা ব্যবসাকে সামাজিক ব্যবসা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে তিনি বলেন, এ ধরনের ব্যবসা পরিবেশ ও মানবজাতিকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘যুবকরা এই জীবনধারাকে একটি পছন্দ হিসেবে গ্রহণ করবে। প্রতিটি যুবক ‘থ্রি জিরো’ ব্যক্তি হিসেবে বড় হবে; অর্থাৎ শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শুধুমাত্র সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে ধন-সম্পদের কেন্দ্রীভবন শূন্য এবং নিজেদেরকে উদ্যোক্তায় পরিণত করার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব।’

ইউনূস সেন্টারের পরিচালক লামিয়া মোর্শেদ জানান, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪,৬০০ ‘থ্রি জিরো’ ক্লাব রয়েছে, যার প্রতিটিই অধ্যাপক ইউনূসের এই স্বপ্ন দ্বারা অনুপ্রাণিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশেও এই ক্লাবের বিস্তার দিন দিন বাড়ছে। তবে যে কেউ এই ক্লাবে নিবন্ধিত হতে পারবে না, বরং কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা হয়।

অধ্যাপক ইউনূসের উদ্ধৃতি দিয়ে লামিয়া মোর্শেদ বলেন, ‘স্যার সর্বদা বলেন, আমাদের সমাজের সমস্যাগুলো আমরাই তৈরি করেছি। সমাধানের জন্য যুবকরাই সঠিক ব্যক্তি, কারণ তাদের মাথায় অনেক নতুন ধারণা রয়েছে।’

তিনি ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্ব বাস্তবায়নে সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “ধরুন, কেউ ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করল যেখানে আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থান হবে। এই ব্যবসার লাভ জনকল্যাণে ব্যয় করা হবে।”

গবেষণা সংস্থা ‘র‍্যাপিড’-এর চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্ব পরিবেশবান্ধব দেশ গড়ে তোলার এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্ব বাস্তবায়িত হলে দেশের সর্বস্তরে উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হবে।

আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশে আয়োজিত যুব উৎসবে ‘থ্রি জিরো’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানান লামিয়া মোর্শেদ।