বিদেশে চিকিৎসায় বছরে ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বাংলাদেশিদের

দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে বাংলাদেশিরা বছরে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মালিক তালহা ইসমাইল বারী। ঢাকায় ডিসিসিআই আয়োজিত ‘রিভার্সিং দ্য আউটবাউন্ড হেলথকেয়ার ট্যুরিজম’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন। বারী ইউনাইটেড হাসপাতালের একজন পরিচালকও।

ছবি - সংগৃহীত

বিশেষায়িত চিকিৎসার অভাব, চিকিৎসকদের প্রতি আস্থার সংকট, উন্নত প্রযুক্তির স্বল্পতা এবং বিদেশের তুলনায় কম খরচ – এসব কারণে মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বারী জানান, দেশে ৫,৪৬১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যার মধ্যে ১,৮১০টি ঢাকা বিভাগে অবস্থিত। গ্রামাঞ্চলে মানসম্মত চিকিৎসা সেবার অভাব রয়েছে, ফলে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়ে যায়। সীমিত অবকাঠামো, দক্ষ জনবলের অভাব, চিকিৎসা সেবার মান ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, কম ডাক্তার-রোগী অনুপাত এবং দীর্ঘ অপেক্ষার সময়—এগুলোকে দেশে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।

তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার জন্য ৩০,১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার, যা জাতীয় বাজেটের মাত্র ৩.৭৮ শতাংশ। বাংলাদেশে জনপ্রতি স্বাস্থ্য ব্যয় ১১০ ডলার, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় এ ব্যয় ৪০১ ডলার।

ছবি - সংগৃহীত

সেমিনারে জাতীয় অধ্যাপক এ.কে আজাদ খান বলেন, সুযোগ-সুবিধা, আস্থা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের অভাবে রোগীরা বিদেশে চিকিৎসা নেয়। এই প্রবণতা বিপরীত করতে সঠিক পরিকল্পনা এবং বাধাগুলো চিহ্নিত করা জরুরি। ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি খান আরও বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞান এক অবিরাম পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া। সর্বোত্তম প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলাতে সঠিক পাঠ্যক্রম প্রয়োজন। তিনি গবেষণাগারের মান উন্নত করা, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, গবেষণা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমএন্ডডিসি)-কে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম কাজল বলেন, এই খাতের উন্নয়নে আস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি সকল ধরনের রোগীর জন্য গ্রামাঞ্চলে মানসম্মত হাসপাতাল স্থাপনের ওপর জোর দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, সরকারি স্বাস্থ্য প্রশাসন কার্যকর করতে শুধুমাত্র চিকিৎসকদের বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া উচিত। তিনি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের আদলে একটি ‘স্বাস্থ্য সেবা কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দেন।

বিএমএন্ডডিসির রেজিস্ট্রার লিয়াকত হোসেন বিদেশি চিকিৎসকদের বাংলাদেশে প্র্যাকটিস করার জন্য জাতীয় নীতি সরলীকরণের পরামর্শ দেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল বশর মো. জামাল জানান, বাংলাদেশে ১,৩৪,০০০ চিকিৎসকের মধ্যে মাত্র ৩৩,০০০ জন সরকারি সেবায় নিয়োজিত। অথচ, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১০,০০০-এর বেশি বিদেশি ছাত্র শিক্ষা গ্রহণ করছে।

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা আস্থা এবং সন্তুষ্টির অভাবে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, রোবোটিক সার্জারির মতো কিছু উন্নত চিকিৎসা দেশেই উপলব্ধ।

আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় সফলতা, গ্রাহক সন্তুষ্টি সুনিশ্চিত করা, চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি এবং ব্র্যান্ডিং উদ্যোগের মাধ্যমে এই প্রবণতা বিপরীত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

আশরাফ আহমেদ আরও বলেন, বিদেশি চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের প্রতি আমাদের আরও উন্মুক্ত হতে হবে।