সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্বই ভরসা, বলছেন সাইফুল আলম, আন্তর্জাতিক সালিশের হুমকি

এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম দাবি করেছেন, তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যে ‘ভীতি প্রদর্শন’ চালাচ্ছেন, তা থেকে তাকে সুরক্ষা দেবে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব। সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা আইনজীবীদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এমন দাবি করেছেন বলে প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

সাইফুল আলম

আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভানের মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, এ ধরনের ‘ভীতি প্রদর্শনের’ জন্য তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যেতে পারেন।

গত আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণকারী সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর এর আগে এফটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছিলেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো থেকে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা (১০ বিলিয়ন ডলার) পাচার করেছেন।

এফটি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ‘প্রকাশ্যে উস্কানিমূলক ও অপ্রমাণিত মন্তব্য’ করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে, যা এস আলমের বিরুদ্ধে ‘ভীতি প্রদর্শনের প্রচারণা’। বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দুই লাখ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে এস আলম গ্রুপে।

মনসুর অভিযোগ করেছিলেন, একটি শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সহায়তায় নেতৃস্থানীয় ব্যাংকগুলো দখল করে পরবর্তীতে ব্যাংকিং খাত থেকে বিদেশে অর্থ পাচার করেছিলেন সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা। তিনি নতুন অংশীদারদের ঋণ প্রদান ও আমদানি খরচ বেশি দেখানোর মতো কৌশলের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও এনেছিলেন, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, ‘ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ব্যাংক ডাকাতি’।

এস আলম গ্রুপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা আইনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।

সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, তাদের দুই ছেলে আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির পক্ষে পাঠানো চিঠিতে অভিযোগগুলোকে ‘স্বপ্রণোদিত মিথ্যাচার ও মানহানিকর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, গভর্নরের বিবৃতিগুলো ‘এস আলম গ্রুপ এবং বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ধ্বংস করার জন্য একটি পরিকল্পিত প্রচারণা’।

চিঠিতে বলা হয়েছে, চার বিনিয়োগকারীই সিঙ্গাপুরের নাগরিক। তবে সাইফুল আলমের পরিবার কখন সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছিল এবং এরপরেও তারা বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন কিনা সে বিষয়ে আইনি প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্রের কাছে জানতে চেয়েছিল এফটি। তবে এতে সাড়া দেননি তিনি। এমনকি সিঙ্গাপুর সরকারও কোনো জবাব দেয়নি।

২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি রয়েছে। চিঠিতে এই চুক্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বক্তব্যকে 'বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পক্ষের' বলে বিবেচনা করা যায়। অভিযুক্তরা সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং বাংলাদেশের ১৯৮০ সালের বৈদেশিক বিনিয়োগ আইনের আওতায় বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে ‘অধিকার ও সুরক্ষা’ পাবেন। প্রয়োজনে বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাবেন তারা।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এফটিকে জানিয়েছেন, সাক্ষাৎকারের সময় তিনি এস আলমের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছিলেন, সেগুলো ‘পুরোপুরি প্রমাণিত’।