১০০ দিনে ১৬০০ গুমের তথ্য! শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে সরকার

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ রবিবার জানিয়েছেন, গত ১৫ বছরে সংঘটিত সকল অপরাধের বিচার করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার ১৬০০ জনের তথ্য এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এই সংখ্যা ৩৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

এছাড়াও, পদচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।

‘শুধু জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড নয়, গত ১৫ বছরে সংঘটিত সব অপরাধের বিচার হবে। এ সময় অনেক মানুষ গুম ও হত্যার শিকার হয়েছেন,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

গুমের ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কমিশনের প্রধান আমাকে জানিয়েছেন, ১৬০০ গুমের শিকার ব্যক্তির তথ্য তারা পেয়েছেন। তাদের ধারণা এই সংখ্যা ৩৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস আরও বলেন, অনেক ভুক্তভোগী আবারও হয়রানির ভয়ে কমিশনে অভিযোগ দিতে ভয় পাচ্ছেন।

‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা নির্দ্বিধায় কমিশনে অভিযোগ জানান। কেউ আপনাদের আর ক্ষতি করতে পারবে না,’ বলেন তিনি।

স্বৈরাচারী শাসনে বিপর্যস্ত বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় পুনর্গঠন করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান।

‘জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর আমরা বিশৃঙ্খল একটা দেশ পেয়েছি। স্বৈরাচারী শাসন টিকিয়ে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল,’ বলেন তিনি।

বিপ্লবের সময় প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী ও শ্রমিক শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করছে। এই বিপ্লবে প্রায় ১৯,৯৩১ জন আহত হয়েছেন।’

আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকার ১৩টিসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

‘প্রতিদিন নতুন নতুন শহীদের নাম যুক্ত হচ্ছে, যারা স্বৈরশাসকদের অত্যাচারে প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা প্রতিটি হত্যার বিচার নিশ্চিত করব। জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি তা ভালোভাবে এগিয়ে চলছে,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

গুমের কমিশনের সদস্যদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীদের যেসব বর্ণনা পাওয়া গেছে, তা অত্যন্ত মর্মান্তিক বলে তিনি উল্লেখ করেন।

‘আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনব। অভিযুক্ত যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন, যে বাহিনীরই সদস্য হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক আদালতেও জুলাই-আগস্টের গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি। আমি ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের সঙ্গে আলোচনা করেছি,’ বলেন ড. ইউনূস।

জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের সকল শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে বলে তিনি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘একটি পরিবারও বাদ যাবে না। আহত সকল শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও নাগরিকের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে।’

আহতদের দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদ পরিবারের কল্যাণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি সমন্বিত তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

গুলিতে চোখ হারানোদের জন্য নেপাল থেকে কর্নিয়া আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

‘এছাড়া, প্রয়োজনে আহতদের সরকারি খরচে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে। জুলাইয়ের গণআন্দোলনের কোনো শহীদ বা আহত শিক্ষার্থী ও শ্রমিক পুনর্বাসন পরিকল্পনা থেকে বাদ যাবে না। এটাই অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার।’