প্রধান উপদেষ্টা: সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও পাওয়া যাবে। তবে নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটি আর থামবে না। সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিতও হতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে আজ রবিবার (১৭ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যদিও সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে গত ১৫ নভেম্বর। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে গত ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।

ভাষণের শুরুতে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখ লাখ শহীদ এবং চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে ছাত্র, শ্রমিক, জনতাসহ নিহত সব শহীদকে সশ্রদ্ধ সালাম ও গভীর শ্রদ্ধা জানান ড. ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা একই সঙ্গে স্মরণ করেছেন ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে আহত, পঙ্গুত্ব বরণকারী, চোখের দৃষ্টি হারা এবং যারা এক দফা নিয়ে দাঁড়িয়ে দেশকে হিংস্র স্বৈরাচারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন সবাইকে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিন অতিক্রমের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট সরকারপ্রধান পালিয়ে গেলে সাময়িকভাবে দেশ সরকার-শূন্য হয় । পুলিশ প্রশাসনও সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে দেশে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির তৈরি হয়। স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত এই দেশকে সবাইকে মিলে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক-জনতার শহিদি মৃত্যু হয়। এই বিপ্লবে আহত হয়েছেন ১৯ হাজার ৯৩১ জন। আহতদের জন্য ঢাকার ১৩টি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা প্রতিটি হত্যার বিচার করব। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব।

শুধু জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করা হবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে। গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশন প্রধান জানিয়েছেন অক্টোবর পর্যন্ত তারা ১ হাজার ৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা, এই সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান বলেন, আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মতামত নিয়ে যাচ্ছি। চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় তাদের প্রতিটি মতামত সক্রিয় ভাবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ে, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করতে পারবে। তাদের সুপারিশ নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ক্রমাগতভাবে আলোচনায় বসবো। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতেই আমরা সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করব।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ আরো কিছু কাজ শুরু করে দিতে পারবে যা একটি অবাধ নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। তবে আমরা মনে করি না যে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিলেই নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ। রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংস্কার আমাদের এই সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার।

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সংস্কার নিয়ে দেশবাসীকে খোলামনে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নির্বাচন নিয়ে আপনাদের সব বক্তব্য বিনা দ্বিধায় বলতে থাকুন। সবার মনের কথা তুলে ধরুন। আমার অনুরোধ সংস্কারের কথাটাও একই সঙ্গে বলুন। সংস্কারকে পাশ কাটিয়ে যাবেন না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা দুদিন পরে চলে যাব। কিন্তু আমাদের মাধ্যমে জাতির জন্য যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হলো সে সুযোগটা যেন কোনো রকমেই হাতছাড়া করে না দিই, এটার ব্যাপারে দৃঢ় থাকার জন্য আমি দলমত, নারী-পুরুষ, ধর্ম, তরুণ-বৃদ্ধ, ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কৃষক নির্বিশেষে সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি আপনারা আমার এই আবেদন গ্রহণ করবেন।