দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযানে নামছে রাজস্ব বোর্ড

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সময়ের বিবর্তনে ক্ষুণ্ণ হওয়া সরকারি কর্মচারীদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করাই এর মূল লক্ষ্য।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লোগো

এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে রাজস্ব আদায়কারী কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে।

তারা বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা স্বীকার করুন বা না করুন, এটা সত্য যে গত ১৫ বছরে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

‘দেশের সর্বোচ্চ কার্যালয় থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ায় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আঘাত হানার এটাই সময়,’ তারা বলেন।

এনবিআর সূত্র মতে, দেশের ছাত্র ও জনগণের আন্দোলনের ফলে সরকার পরিবর্তনের পর এনবিআরসহ সরকারি দপ্তরগুলোতে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে একটা আন্দোলন চলছে।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান এনবিআরসহ সকল সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, রাজস্ব আদায়কারী কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিবাজ এনবিআর ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

‘আমরা আমাদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি,’ তিনি বলেন।

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এনবিআর চেয়ারম্যানের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযান চালাতে হলে তার জন্য প্রমাণ ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তি থাকা দরকার। অন্যথায় এই পদক্ষেপ ব্যর্থ হতে পারে, যা সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে না।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন আয়কর সার্কেলের সরকারি কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন (ই-রিটার্ন) দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে।

সরকারি কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন জমার পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, এটি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহজেই খুঁজে বের করার জন্য এনবিআরের পক্ষে খুবই সুবিধাজনক হবে।

‘আগামী কয়েক বছর ধরে যদি এই অনলাইন জমা অব্যাহত থাকে তাহলে রাজস্ব আদায়কারী কর্তৃপক্ষের জন্য একটি ভালো ডাটাবেস তৈরি হবে, কারণ এই ডাটাবেসটি সমন্বিত বাজেট এবং হিসাব ব্যবস্থার (আইবিএএস) সাথে সংযুক্ত,’ তিনি বলেন।

এনবিআর কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, এক ক্লিকেই এনবিআর যেকোনো সরকারি কর্মকর্তার আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং তার সম্পদের তথ্য পেতে সক্ষম হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল-২০২৩’ নামে একটি আইন পাস করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের সময় সংঘটিত ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তারের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

স্বায়ত্তশাসিত, আইন প্রণয়নকারী এবং স্থানীয় সরকারি সংস্থার কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের সময় দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গ্রহণের আগে তাদের গ্রেপ্তার করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে।

এই আইনে স্বায়ত্তশাসিত, আইন প্রণয়নকারী এবং স্থানীয় সরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক ব্যয়ের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক, আবগারি ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মতিউর রহমানের সম্পদের ব্যাপারে বিতর্কের পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) তার সম্পর্কে সব তথ্য খুঁজে বের করার জন্য কাজ করছে।

মতিউর রহমানের সম্পদের ব্যাপারে বিতর্কের সূত্রপাত হয় তার ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি কোরবানির ছাগলের ছবি পোস্ট করে ১২ লাখ টাকায় কেনার দাবি করার পর।

এই ঘটনা ৭৮,০০০ টাকা মূল বেতনের গ্রেড-১ কর্মকর্তা হিসেবে তার আয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

পরে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ির সঙ্গে ইফাতের ছবি এবং ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে মতিউর রহমানের ফ্ল্যাট ও রিসোর্টসহ সম্পদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে।

সূত্র: ইউএনবি