পররাষ্ট্র উপদেষ্টা: রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান হচ্ছে না

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত ও চীন কেন প্রত্যাশিতভাবে এগিয়ে আসছে না, তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন শনিবার বলেছেন, এটি কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সমগ্র অঞ্চল এবং এর বাইরের জন্যও একটি সম্ভাব্য হুমকি।

মো. তৌহিদ হোসেন

তিনি বলেন, ‘সুড়ঙ্গের শেষে কোন আলো দেখছি না এবং আমি মনে করি না রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও সহজ সমাধান হবে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতির শিকার হয়েছে ‘

ঢাকার একটি হোটেলে বঙ্গোপসাগর সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এই বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন।

কক্সবাজার এবং ভাসানচরে বর্তমানে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।

ভারত ও চীনের ভূমিকা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তিনি কাউকে দোষারোপ করছেন না, কারণ সবাই নিজের স্বার্থ দেখে।

কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে তা মেলে না এবং যার কারণে এই সমস্যা টিকে আছে এবং সমাধানের কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না, বলেন উপদেষ্টা।

এই সমস্যার সমাধান না হলে, এটি পুরো বিশ্বের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে, তিনি বলেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ প্রত্যাশিত সহযোগিতা পায়নি।

‘গত আট বছরে আমাদের প্রতিবেশী, বিশেষ করে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যে ধরনের সহযোগিতা আমরা আশা করেছিলাম, তা পাইনি,’ তিনি বলেন।

তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রশ্ন উঠে, চীন কেন বাংলাদেশের পক্ষে এই সমস্যা সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে না? কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকারের জন্য মিয়ানমার চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একইভাবে, উপদেষ্টা বলেন, ভারত মনে করে কালদান প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ এবং এই প্রকল্পের জন্য তাদের মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের মধ্যে আটকে পড়েছে।

রোহিঙ্গা যুবকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বর্ধিত উদ্বেগের বিষয়ে হোসেন বলেন, যাদের ভবিষ্যতের কোন আশা নেই, তারা অন্যদের কাজ দেখে বসে থাকবে না।

‘একটা সময় আসবে যখন তারা কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, আমাদের প্রতিবেশীদের এবং দূর-দূরান্তের মানুষের জন্যও একটা গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে,’ তিনি বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ছাড়াও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারী রয়েছে – যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং চীন – এবং প্রভাব বিস্তারের একটি প্রতিযোগিতা চলছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সম্পদের জন্য বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ তৃতীয়বারের মতো বঙ্গোপসাগর সংলাপ ২০২৪, একটি আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক সম্মেলন আয়োজন করেছে।

সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান এবং কার্যনির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

জিল্লুর বলেন, তৃতীয় বঙ্গোপসাগর সংলাপ সিজিএস আয়োজিত এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান।

এই বছরের সম্মেলন, ‘এক বিভক্ত বিশ্ব’, ৮০ টিরও বেশি দেশ থেকে ২০০ জনেরও বেশি বক্তা, ৩০০ জন প্রতিনিধি এবং ৮০০ জন শ্রোতা একত্রিত করেছে,’ তিনি বলেন।