নতুন পৃথিবী গড়ার আহ্বান জানালেন ড. ইউনূস

বিদ্যমান সভ্যতার ব্যর্থতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো চ্যালেঞ্জের মুখে একটি নতুন পৃথিবী কল্পনা করার আহ্বান জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার রাজধানীতে বে অফ বেঙ্গল সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি এই আহ্বান জানান।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিদ্যমান সভ্যতা আমাদের ব্যর্থ করেছে। পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি আত্মধ্বংসী সভ্যতা। আর্থিক দিক থেকে এটি সম্পদের চরম কেন্দ্রীকরণের দিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।’

তিনি এমন একটি অর্থনীতি গড়ার ওপর জোর দেন যেখানে প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সকলের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হবে।

তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করি, একে অপরের কথা শুনি এবং একটি নতুন পৃথিবী কল্পনা করার সাহস করি, যা পরিবেশগতভাবে নিরাপদ এবং এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তোলে যেখানে প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফল সবার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হবে, শুধুমাত্র কিছু বিশেষ সুবিধাভোগীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।’

২০০৬ সালের শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস নিজেকে একজন আশাবাদী মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি উদ্ভাবনী ধারণা ও কল্পনার শক্তিতে বিশ্বাসী।

‘যদি আমরা একসঙ্গে কল্পনা করতে পারি, তাহলে সেটি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। আসুন আমরা এটি করি,’ তিনি বলেন।

বিদ্যমান সভ্যতার ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে নতুন সভ্যতা গড়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিদ্যমান সভ্যতা একটি আত্মঘাতী সভ্যতা। আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সম্পদের চরম সঞ্চয়ের দিকে পরিচালিত করছে।’

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের জন্য ‘তিন শূন্য’ -- শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য সম্পদের কেন্দ্রীকরণ এবং শূন্য বেকারত্ব -- এই ধারণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সামাজিক ব্যবসা প্রচলন এবং যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে এই লক্ষ্য হাসিল করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য তাৎক্ষণিক এবং ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমাদের অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের ফ্রন্টলাইনে রয়েছে। প্রতি বছর উপকূলীয় জনগোষ্ঠী জীবন, জীবিকা ও গৃহহীন হচ্ছে।’

বাংলাদেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৭১ মিলিয়ন মানুষের অর্ধেকের বয়স ২৭ বছরের নিচে। এটি আমাদের দেশকে সৃজনশীলতায় অত্যন্ত শক্তিশালী করে তুলেছে’ তিনি যুবসমাজকে টেকসই উন্নয়নে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস এই সম্মেলনকে ‘মত বিনিময়ের স্থান’ বলে অভিহিত করেন এবং সকলকে একটি নতুন বিশ্ব গড়ার চিন্তাভাবনা ভাগাভাগি করার অনুরোধ জানান। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।