সিলেটে বকেয়া বেতন-রেশনের দাবিতে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ

সিলেটে আজ শুক্রবার শত শত চা শ্রমিক বকেয়া বেতন ও রেশন পরিশোধের দাবিতে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছেন। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টার, সিলেট জেলা শাখার আয়োজনে এই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে শ্রমিকরা সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানের হাজার হাজার শ্রমিকের ভয়াবহ আর্থিক ও মানবিক সংকটের চিত্র তুলে ধরেন।

ছবি - সংগৃহীত

সিলেট জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।

বক্তারা সরকার এবং চা বাগান কর্তৃপক্ষের প্রতি এই সংকট দ্রুত সমাধান এবং চা শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। একজন শ্রমিক নেতা বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম শুধু বেতনের জন্য নয়, বরং আমাদের বেঁচে থাকা এবং মান-মর্যাদার জন্য।’

কিন ব্রিজ প্রাঙ্গণ থেকে দুপুর ২টায় শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ মিছিল জিন্দাবাজার হয়ে সিলেট শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। জাতীয় চা কোম্পানি (এনটিসি) পরিচালিত ১২টি চা বাগানের প্রায় ১২,০০০ শ্রমিকের দুর্দশা লাঘবে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানানো হয়।

শ্রমিকরা অভিযোগ করেন যে, প্রায় তিন মাস ধরে তারা বেতন ও রেশন থেকে বঞ্চিত। এর ফলে তাদের পরিবারগুলি চরম হতাশার মুখে পড়েছে। সরকারের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া এবং ২৬ দিনের ধারাবাহিক ধর্মঘট পালন করার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে তারা দাবি করেন।

বিক্ষোভকারীরা সতর্ক করে বলেন, চা শ্রমিক ও তাদের পরিবারসহ ৪০,০০০-৫০,০০০ মানুষ এখন অনাহারের মুখে।

একজন বিক্ষোভকারী প্রশ্ন তোলেন, ‘যখন জীবনযাত্রার ব্যয় আকাশচুম্বী, তখন আমাদের ১৭৮.৫০ টাকার দৈনিক মজুরিও দেওয়া হচ্ছে না। আমরা কিভাবে বেঁচে থাকব?’

বিক্ষোভকারীরা চা শিল্পের সামগ্রিক অবহেলারও সমালোচনা করেন। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের চা বাগানে বেতন বিলম্ব, অনিয়মিত রেশন এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ পরিশোধ না করার বিষয়টি তুলে ধরেন। তারা আরও অভিযোগ করেন যে, বাগান মালিকরা বৈষম্যমূলক মজুরি নীতি এবং উৎসব বোনাসের অসম বন্টনের মাধ্যমে শ্রমিকদের শোষণ করছে।

শ্রমিকরা ২০২৩-২৪ সালের জন্য বাজার পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ন্যায্য ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর অবিলম্বে বাস্তবায়ন, নিয়মিত বেতন ও রেশন প্রদানের দাবি জানান। পরিবারের জন্য পূর্ণ রেশন, ভূমি অধিকার, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন এবং নৈমিত্তিক ও উপার্জিত ছুটির বৈষম্য নিরসনের দাবিও তোলেন তারা।

মৌলভীবাজার চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ণ হাজরা সহ অন্যান্য শ্রমিক নেতারাও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ও শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের সমাপ্তি ঘটে।