ট্রাম্পের জয় ভারতের জন্য কতটা সুবিধাজনক?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ উদ্বিগ্ন হলেও ভারত এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ নয়াদিল্লির পক্ষে সুবিধাজনক হতে পারে, বিশেষ করে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় অংশ না নেওয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চাইছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি

গত সপ্তাহান্তে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘আমি জানি অনেক দেশ আমেরিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভারত তাদের মধ্যে একজন নয়।’ তিনি আরও জানান, ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর যে তিনটি ফোন কল পেয়েছেন, তার মধ্যে একটি ছিল মোদির। 

উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, ট্রাম্পের জয়ের অর্থ হলো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থানের মতো যেসব নীতি নয়াদিল্লিকে পশ্চিমের সঙ্গে বিরোধে ফেলেছে, সেগুলো আর ওয়াশিংটনের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্য, অভিবাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে মতবিরোধ থাকতে পারে, তবে সামগ্রিকভাবে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের অর্থ হলো পশ্চিমের, বিশেষ করে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।’

নরেন্দ্র মোদি ভারতকে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির উদীয়মান বিশ্বশক্তি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন, যা চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে। তবে সমালোচকদের মতে, তার স্বৈরাচারী রাজনীতি ও ডানপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দেশটিকে মেরুকরণ করেছে, যেখানে সংখ্যালঘুরা ক্রমবর্ধমানভাবে প্রান্তিক হচ্ছে এবং বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হুমকির মুখে।

গত বছর রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন মোদিকে রাষ্ট্রীয় সফরের সম্মান প্রদান করলেও, মানবাধিকার ইস্যুতে সমালোচনার মুখে পড়েন। তা সত্ত্বেও, দুই দেশ প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে নতুন চুক্তি সম্পাদন করে।

দক্ষিণ এশিয়া ও বৈদেশিক নীতি বিশেষজ্ঞ উদয় চন্দ্র মনে করেন, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এই ধরনের উদ্বেগের বিষয় থাকবে না। ‘ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি নতুন দিগন্তের সূচনা... তিনি অনেক বেশি লেনদেনমুখী,’ তিনি বলেন।

রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসক ট্রাম্প, মস্কোর সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের কৌশলগত অংশীদারিত্ব, রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের রেকর্ড ক্রয় এবং ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানের ব্যাপারে বেশি বোঝাপড়ার লোক হতে পারেন। "গত দুই বছরে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের প্রধান কাঁটা এটিই... ট্রাম্পের ক্ষেত্রে, আমি এটিকে সমস্যা হিসেবে দেখছি না," চন্দ্র বলেন।

বাণিজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক মতবিরোধ দেখা দেয়। ট্রাম্প ভারতকে ‘ট্যারিফ রাজা"’ বলে অভিহিত করেন। ২০১৯ সালে, তিনি ভারতের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করেন এবং ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে।

এখন, ট্রাম্প সমস্ত আমদানির ওপর ১০% বা ২০% ‘সার্বজনীন’ কর এবং চীনা পণ্যের ওপর ৬০% পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি করতে চান। ভারত, যারা আমেরিকাকে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে, তারা ব্যতিক্রম হবে না।

সিঙ্গাপুরের দক্ষিণ এশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক সি রাজামোহন বলেন, "ট্রাম্পের ন্যায্য বাণিজ্যের ওপর জোর মোকাবেলায় নয়াদিল্লিকে নীতিমালায় কার্যকর পরিবর্তন আনতে হবে।"

অভিবাসনও একটি জটিল বিষয় হতে পারে, বিশেষ করে যদি ট্রাম্প দক্ষ অভিবাসন রোধ করার চেষ্টা করেন। ভারতীয়রা এইচ১-বি ভিসার জন্য বৃহত্তম আবেদনকারী গোষ্ঠী, কিন্তু ট্রাম্প একে ‘খুব খারাপ’ এবং ‘অন্যায্য’ বলেছেন।

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিষ্কার শক্তির অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের দক্ষিণ এশিয়া প্রোগ্রাম পরিচালক মিলান বৈষ্ণব বলেন, ‘গত চার বছরে ভারত ও আমেরিকা এই বিষয়ে অনেক কিছু করেছে – কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের সঙ্গে বেশি সংযুক্ত থাকায় এটি ভেঙে যেতে পারে।’

ট্রাম্প ও মোদি উভয়ই শক্তিশালী নেতা, যারা একনিষ্ঠ সমর্থকদের ওপর নির্ভর করেন এবং মেরুকরণ বাড়িয়ে ভোট পেতে চান।

‘তারা উভয়ই উৎসাহী জাতীয়তাবাদী যারা দেশকে শক্তিশালী করতে চান,’ বিশ্লেষকরা বলেছেন।

বিশ্লেষকরা দুজনের ব্যক্তিগত বন্ধনের দিকেও ইঙ্গিত করেন। ২০২০ সালে মোদি ট্রাম্পের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ট্রাম্প টেক্সাসে মোদির জন্য বিশাল সমাবেশ করেছিলেন।