সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাতিল চান অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আজ সংবিধানে ব্যাপক সংশোধনীর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে অভিহিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিধানগুলো বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।

মো. আসাদুজ্জামান

পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে শুনানির পঞ্চম দিনে তিনি যুক্তি দেন যে, এই পরিবর্তনগুলো দেশের গণতান্ত্রিক এবং ঐতিহাসিক মূল্যবোধের সঙ্গে সংবিধানকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল হওয়া গণভোটের বিধান পুনঃস্থাপনেরও দাবি করেছেন।

শুনানির পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী বহাল রাখা মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ২০০৭ এর জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ক্ষুণ্ণ করে। ‘এই সংশোধনী আবু সাঈদ এবং মুগ্ধের মতো শহীদদের আত্মত্যাগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে,’ তিনি বলেন।

তিনি এই সংশোধনীকে স্বৈরাচারী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার এবং সংবিধানের সর্বোচ্চতাকে লঙ্ঘন করার অভিযোগ করেন। ‘এটি গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের ওপর সরাসরি আক্রমণ,’ তিনি বলেন। তিনি আরও বলেন যে, এই সংশোধনী নাগরিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে।

সংবিধানের প্রস্তাবনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’  হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আসাদুজ্জামান বাংলাদেশের স্বাধীনতায় মুজিবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করেন। ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য, কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই উপাধি আরোপ করা বাংলাদেশের জনগণ কর্তৃক যৌথভাবে প্রণীত সংবিধানের মূল চেতনা থেকে বিচ্যুত,’ তিনি উল্লেখ করেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি দেন যে, এই অন্তর্ভুক্তি রাজনৈতিক মেরুকরণকে উৎসাহিত করে এবং এটি এমনভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে যা ভিন্নমতকে সীমাবদ্ধ করে, তাকে সমালোচনা করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত করে। ‘এটি সংবিধানের অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনার পরিপন্থী,’ তিনি বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও ৬ নং অনুচ্ছেদের সমালোচনা করেন, যা ভাষার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় নির্ধারণ করে। তিনি দাবি করেন যে, এটি নাগরিকদের মধ্যে অযথা বিভাজন সৃষ্টি করেছে। তিনি যুক্তি দেন যে, অন্য কোনো দেশ জাতীয় পরিচয়ের ভিত্তি হিসেবে ভাষা ব্যবহার করে না, যা এই বিধানকে অস্বাভাবিক এবং সমস্যাযুক্ত করে তোলে।

তিনি ৭(ক) এবং ৭(খ) অনুচ্ছেদেরও সমালোচনা করে বলেন, এগুলো গণতন্ত্রকে দুর্বল করে এবং স্বৈরাচারী উদ্দেশ্য পূরণ করে। এই অনুচ্ছেদগুলো বাতিলের আহ্বান জানিয়ে তিনি দাবি করেন যে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দমন করার জন্য দূরভিসন্ধি নিয়ে এগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।

৮ নং অনুচ্ছেদ সম্পর্কে আসাদুজ্জামান যুক্তি দেন যে, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা এমন একটি জাতির বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না যেখানে ৯০% জনসংখ্যা মুসলিম। তিনি আল্লাহতে অবিচল বিশ্বাসের ওপর জোর দেওয়া মূল বাক্য পুনঃস্থাপনের পক্ষে বলেন। তিনি ৯ নং অনুচ্ছেদে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, এটিকে আধুনিক গণতান্ত্রিক নীতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে অভিহিত করেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের তীব্র বিরোধিতা করে এটিকে ‘গণতন্ত্রের বুকে ছুরিকাঘাত’ বলে অভিহিত করেন। তিনি পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী বাস্তবায়নের জন্য বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলকে অভিযুক্ত করেন এবং এই পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর বলে আখ্যায়িত করেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে গণভোটের বিধান পুনঃস্থাপনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা পুনরুদ্ধারের জন্য এটি অপরিহার্য। তিনি ‘নির্বাচনী কারচুপি’র মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের এই গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া একতরফাভাবে বাতিল করার জন্য সংশোধনীর সমালোচনা করেন।

সূত্র: ইউএনবি