ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ‘শাস্তি’ দিচ্ছে ‘ক্ষুব্ধ’ ফ্রান্স!

জেরুজালেমে ফরাসি কনস্যুলেট কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ ফ্রান্স। এ ঘটনায় ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারট এই ঘোষণা দেন।

জিন-নোয়েল ব্যারট

গত সপ্তাহে জেরুজালেমে ফরাসি কনস্যুলেটের কিছু কর্মীকে সাময়িকভাবে আটক করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

ফ্রান্স ২৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যারট বলেন, ‘এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এই কারণেই আমি ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফরাসি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অনুমতি ছাড়া প্রবেশ ফ্রান্স কোনোভাবেই সহ্য করবে না।’

‘আমরা এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুতর হিসেবে বিবেচনা করছি। এ কারণেই প্রাথমিক ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’ বলেন ব্যারট।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটি স্পষ্ট করে দেয় যে এ ধরনের ঘটনা আবার ঘটলে ফ্রান্স তা মেনে নেবে না। … আমি রাষ্ট্রদূতকে ‘শাস্তি’ দিচ্ছি।’

গত ৭ নভেম্বর জেরুজালেমে ফরাসি কনস্যুলেট জেনারেলের দুই কর্মীকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করার পর মঙ্গলবার রাষ্ট্রদূত জশুয়া জারকাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়।

ব্যারটর হস্তক্ষেপের পর কর্মীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই গ্রেপ্তারকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে সঙ্গে উল্লেখ করে যে, কর্মীদের কূটনৈতিক মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও তাদের আটক করা হয়েছে।

ইসরায়েলি মন্ত্রীর ফ্রান্স সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা

ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের ফ্রান্স সফর নিয়ে এখনও কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন ব্যারট। ‘ইসরায়েল ফরএভার ফাউন্ডেশন’-এর এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য স্মোট্রিচকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শোনা গেলেও তা এখনও নিশ্চিত নয়।

ব্যারট বলেন, ‘এই মন্ত্রী যে নীতি অনুসরণ করেন, তা আমরা স্পষ্টভাবে নিন্দা জানাই।... তিনি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পশ্চিম তীর অঞ্চলে অবৈধ ঔপনিবেশিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।’

স্মোট্রিচের অংশগ্রহণে ১৩ নভেম্বর প্যারিসে আয়োজিত হতে যাচ্ছে এক গালা অনুষ্ঠান। অনেক মানবাধিকার সংগঠন এবং আইনপ্রণেতা এই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করলেও শুক্রবার একটি ফরাসি আদালত অনুষ্ঠান বাতিলের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

আমেরিকার পরিবর্তনের জন্য ইউরোপ আরও প্রস্তুত

ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন, এমন পরিপ্রেক্ষিতে এবার ইউরোপ আরও ভালোভাবে প্রস্তুত বলে আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন ব্যারট।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান পরিবর্তনের জন্য ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা ৫৯টি আমেরিকান রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পেরিয়ে এসেছি, আর অবশ্যই ৬০তমটিও পার হব।’

ইউরোপীয় কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে আমরা মুক্ত ব্যবসার মতবাদে বিশ্বাসী ছিলাম।’

‘অন্যায্য বাণিজ্যিক অভ্যাসের বিরুদ্ধে ইউরোপের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া তখন অকল্পনীয় ছিল,’ যোগ করেন ব্যারট।

ট্রাম্পের প্রথম কার্যকালে, তার প্রশাসন ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছিল, যার মধ্যে ইস্পাতের ওপর ২৫% এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০% শুল্ক ছিল। এই শুল্ক উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে ইইউ মোটরসাইকেল এবং জিন্সসহ আমেরিকান পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছিল।

ব্যারট আরও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যদি এই ‘বড় ভুল’ চালিয়ে যায়, তাহলে ইউরোপ তার কৃষি, শিল্প এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করবে।

‘আমরা নিজেদের রক্ষার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত,’ এই বলে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।