ব্যাংকিং স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে, নগদ সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে ঋণ সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১৭টি সুপ্রতিষ্ঠিত তালিকাভুক্ত ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো

সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুরের সভাপতিত্বে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সঙ্গে এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বৈঠকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে সামগ্রিক নগদ প্রবাহের বিষয়টি আলোচিত হয় এবং গভর্নর সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে আরও ঋণ সহায়তা প্রদানের জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেন।

কিছু সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা চলমান সংকট সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জরুরি ভিত্তিতে আরও নগদ সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

গত ৫ নভেম্বর, ছয়টি ব্যাংক—সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক—তাদের নগদ প্রবাহের জরুরি চাহিদা মেটাতে জরুরি নগদ সহায়তা চেয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৫ নভেম্বর পর্যন্ত নয়টি সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যাংক থেকে সাতটি সংকটগ্রস্ত ব্যাংক ৫৫.৮৫ বিলিয়ন টাকা ঋণ সহায়তা পেয়েছে।

কিছু সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক ইতোমধ্যে আন্তঃব্যাংক মানি মার্কেট থেকে ঋণ সহায়তা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি পেয়েছে। ঋণ সহায়তা সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য তিন মাস অন্তর প্রদান করা হবে এবং সুদের হার বিশেষ ঋণ সুবিধা (এসএলএফ) হারের সমান ১১.৫০ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে।

বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের পরিস্থিতি, ঋণপত্রের (এলসি) বকেয়া পরিশোধ, বাধ্যতামূলক ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা, ক্রেডিট কার্ড ঋণের সুদের হার এবং ঋণ মওকুফের নীতি নিয়েও আলোচনা হয়।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে আরও ঋণ সহায়তা প্রদানের জন্য আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ব্যাংকারদের বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্যও বলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা এড়াতে সমস্ত তালিকাভুক্ত ব্যাংককে সতর্কতার সঙ্গে বাজার পরিচালনা করার জন্য বলা হয়েছে।

এছাড়াও, ব্যাংকগুলোকে অধিক মুনাফা করার জন্য ক্রস-কারেন্সি ব্যবস্থা এড়াতে বলা হয়েছে।

বিশ্ব বাজারে দেশের ভাবমূর্তি উন্নত করার জন্য ব্যাংকারদের ঋণপত্রের (এলসি) বকেয়া পরিশোধ অবিলম্বে সম্পন্ন করার জন্যও বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের সামগ্রিক সুদের হারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্রেডিট কার্ড ঋণের সুদের হার পুনর্বিবেচনা করার জন্য দেশের শীর্ষ ব্যাংকাররা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ক্রেডিট কার্ড ঋণের সুদের হার ইতোমধ্যে ২০ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে।

কর্মকর্তা আরও জানান, পুঁজি ঘাটতি থাকলে ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ না দেওয়ার জন্যও গভর্নর নির্দেশ দিয়েছেন।