রিয়াল এখন ‘মিনি হাসপাতাল’

পরপর দুটি বড় ম্যাচে বড় হার। স্প্যানিশ লা লিগায় চলতি মৌসুমের প্রথম ম্যাচে বার্সেলোনার কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এরপর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরে এসি মিলানের কাছে ৩-১ গোলে হার। দুটো হারই ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে।

চলতি মৌসুমে অন্তত ২৫টি ইনজুরিতে পড়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবলাররা। ছবি: এক্স

চেনা আঙিনায় বড় জয় দিয়েই প্রত্যাবর্তন করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। শনিবার রাতে ভিনিচিয়াস জুনিয়রের হ্যাটট্রিকের ওপর দাঁড়িয়ে ওসাসুনাকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। কিন্তু এই জয় পেতে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের।

ওসাসুনা ম্যাচে ইনজুরিতে পড়েছেন রিয়ালের দুই বিভাগের দুই ফুটবলার। দুজনই ব্রাজিলিয়ান। রদ্রিগো গৌজ এবং এডার মিলিতাও প্রথমার্ধে মাঠ ছেড়ে গেছেন। কুড়ি মিনিটে রদ্রিগোর চোটের ধঁকল সামলে উঠতে না উঠতে আরও বড় ধাক্কা খায় রিয়াল মাদ্রিদ।

ওসাসুনার এক ফুটবলার ফেলে দেন মিলিতাওকে। তীব্র ব্যথার প্রতিফলন দেখা গেছে তার শরীরী ভাষায়। স্ট্রেচারে চড়ে মাঠ ছাড়েন ব্রাজিলিয়ান সেন্টার-ব্যাক। আশঙ্কা তখন থেকেই হচ্ছিল। পরদিন রোববার এলো দুঃসংবাদ। লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন মিলিতাও।

ইনজুরির কারণে গত মৌসুমের প্রায় সিংহভাগ সময় মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে ব্রাজিলিয়ান তারকাকে। চলতি মৌসুমেও গুরুতর চোটে পড়েছেন তিনি। মিলিতাওর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে। অন্তত নয় মাস তাকে মাঠে মাঠের বাইরে থাকতে হবে বলে জানিয়েছে ইএসপিএন।

মিলিতাও ছিটকে গেছেন মৌসুমের বাকি সময়ের জন্য। কয়েক দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচার করাতে হবে তার। মিলিতাওর স্বদেশির চোট অবশ্য অতটা গুরুতর নয়। এক মাস বিশ্রামে থাকতে হবে রদ্রিগোকে। এই দুজন মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায় রিয়ালের ইনজুরির মিছিল আরও লম্বা হলো।

রিয়াল মাদ্রিদ এখন একটা ‘মিনি হাসপাতাল’ হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে মৌসুমের বাকি সময়ের জন্য ছিটকে গেছেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার ড্যানি কারভাহাল। এসিএলের চোটে এখনও ভুগছেন দলের অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবা। চোট শঙ্কা জেগেছে লুকাস ভাসকুয়েজকে নিয়েও।

ওসাসুনার বিপক্ষে প্রথমার্ধে পায়ে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে যান ভাসকুয়েজ। দ্বিতীয়ার্ধে তাকে আর মাঠে নামাননি রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি। ঊরুতে চোট পাওয়া রিয়ালের মূল গোলরক্ষক থিবাউট কোর্তোয়ার মাঠে ফেরার নির্দিষ্ট খবর নেই। অ্যাঙ্গেলের চোটে ভুগছেন আরিলিয়েন চৌমেনি।

চোটের সবচেয়ে বেশি ধাক্কা লেগেছে রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণ দুর্গে। দলটিতে বর্তমানে কেবল অভিজ্ঞ তিন ডিফেন্ডার অ্যান্তনিও রুদিগার, ফারল্যান্ড মেন্ডি ও ফ্রান গার্সিয়া আছেন। শোনা যাচ্ছে এই বিপর্যয় সামলাতে মৌসুমের বাকি সময়ের জন্য সাবেক ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক সার্জিও রামোসকে ফিরিয়ে আনবে রিয়াল।

একের পর এক ইনজুরির প্রভাব পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদের পারফরম্যান্সেও। লা লিগায় ১২ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে নেমে আছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সঙ্গে তাদের ব্যবধান ছয় পয়েন্টের। বার্সা অবশ্য এক ম্যাচ বেশি খেলেছে। প্রিয় টুর্নামেন্ট উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগেও বাজে অবস্থা রিয়ালের। চার ম্যাচের দুটিতে হেরে ছয় পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ১৮ নম্বরে নেমে গেছে তারা।

গত মৌসুমজুড়ে রিয়াল মাদ্রিদকে ভালোই ভুগিয়েছে ইনজুরি। তবু আনচেলত্তির ক্ষুরধার মস্তিষ্ক সামলে নিয়েছে সব ঝড়-ঝাপ্টা। এই মৌসুমেও ইতালিয়ান কোচকে বিপদে ফেলে দিয়েছে ইনজুরি। যেভাবে চলছে তেমনটা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে একাদশ গঠন নিয়ে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে আনচেলত্তিকে।

রিয়াল মাদ্রিদের স্বস্তির খবর হচ্ছে, আপাতত খেলা নেই ক্লাব ফুটবল। শুরু হয়ে গেছে দুই সপ্তাহের আন্তর্জাতিক বিরতি। এখন দেখার বিষয়, জাতীয় দলের ম্যাচ খেলতে গিয়ে নতুন করে কেউ ইনজুরিতে পড়েন কিনা! বিরতির পর আগামী ২৪ নভেম্বর মাঠে ফিরবে রিয়াল মাদ্রিদ। লা লিগায় ফেরার ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ লেগানেস।