গুমের তদন্তে কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ড. ইউনূসের

২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সংঘটিত গুমের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনতে ‘গুমের ঘটনা তদন্ত কমিশনকে’ সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

শনিবার নিজ কার্যালয়ে কমিশনের সদস্যদের সাথে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের যা যা দরকার, আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।’ বৈঠকে কয়েকজন উপদেষ্টা এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কমিশনের সদস্যরা জানান, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তারা সরকারকে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেবেন এবং পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করবেন।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, প্রয়োজনে কমিশনের মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত বাড়ানো হবে এবং ভুক্তভোগীদের সুরক্ষার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করা হবে।

কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্ট বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বৈঠকে জানান, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১,৬০০ অভিযোগ তারা পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪০০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে এবং ১৪০ জন অভিযোগকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

কমিশনের একজন সদস্য বলেন, ‘অভিযোগের সংখ্যা দেখে আমরা অভিভূত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিশোধের ভয়ে অনেকে এখনও কমিশনের কাছে আসছেন না। এ থেকে বোঝা যায়, গুমের ঘটনা প্রতিবেদনের চেয়ে অনেক বেশি।’

তিনি আরও বলেন, গুমের সংখ্যা কমপক্ষে ৩,৫০০ হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। কারা এই অপরাধ সংঘটিত করেছে এবং কার নির্দেশে করেছে তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

কমিশনের সদস্য জানান, অনেক ভুক্তভোগী বর্তমানে কারাগারে আছেন, কেউ কেউ এমনকি মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি। গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি দেওয়ায় তাদের এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে।

কিছু গুমের শিকার ভারতের কারাগারে আটক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগীদের গোপনে যেসব স্থানে আটকে রাখা হয়েছিল সেসব স্থানের প্রমাণ সংরক্ষণে সরকারের সহায়তা চেয়েছে কমিশন।

কমিশনের একজন সদস্য বলেন, `অনেক ভুক্তভোগী আমাদের জানিয়েছেন, তারা বছরের পর বছর সূর্যের আলো দেখেননি। কেবল সকালের নাস্তা দেওয়ার সময় তারা বুঝতে পারতেন যে নতুন একটি দিন শুরু হয়েছে।'

তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সম্ভব হলে তাদের পাসপোর্ট বাতিলের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।

বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কমিশন অভিযুক্তদের তালিকা দিলেই তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনফুজ আলম কমিশনের অনুসন্ধানগুলো প্রকাশ্যে আনা এবং গুমের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের উন্মোচন করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।

বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, নূরজাহান বেগম, আদিলুর রহমান খান, এম. সখাওয়াত হোসেন, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রিন্সিপাল প্রেস সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া।