এশিয়ান ন্যাটোর স্বপ্ন ভঙ্গুর, ছোট জোটই ভরসা

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক জোট ন্যাটোর (নর্থ আটলান্টিক ট্রেটি অরগানাইজেশন) এশিয়া সংস্করণ ‘এশিয়ান প্রতিরক্ষা জোট’ গঠন নিয়ে অনেকদিন ধরে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু এখনও সামরিক জোটটির বাস্তবায়নে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনকে মোকাবেলার করতে এই প্রতিরক্ষা জোটের কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু এখন দেশগুলো পরাশক্তি চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাইছে।

লয়েড অস্টিন, অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, এনরিক মানালো এবং গিলবার্তো তেওডোরো ম্যানিলায়, ৩০ জুলাই, ২০২৪, ছবি - সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ন্যাটো ৩২ দেশের বিশাল জোট। এশিয়ায় এরকম কোনো জোট গঠন করলে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না। তার চেয়ে ছোট ছোট প্রতিরক্ষা জোট গঠনে সফলতা আসতে পারে। যেমন- সমুদ্রাঞ্চলে টহল দেওয়ার জন্য ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া মিলে একটি ক্ষুদ্র জোট গঠন করেছে।

ভূরাজনীতি বিশেষজ্ঞ ডন ম্যালেন গিল বলছেন, এখনকার জন্য প্রতিরক্ষা জোট ছোট আকারে হলে তাতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা বেশি পাওয়া যাবে।

আরেক বিশেষজ্ঞ ম্যানিলার দে লা স্যালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক শেরউইন ওনা মনে করেন, ছোট জোট (মিনিয়েটারাল টাইস) গঠন করা বেশি যুক্তিসংগত।

বিশ্লেষক জুলিও অ্যামাডোর মনে করেন, আসিয়ান জোটের দেশগুলো নিয়ে প্রতিরক্ষা জোট গড়ে উঠার সম্ভাবনা কম। কারণ দেশগুলোর মধ্যে অনেক সংকট রয়েছে।

১৯৪৯ সালে ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডার মতো দেশ জোটটির সদস্য। জোটটি গঠনের সময় দেশগুলো একে-অপরকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হাডসন ইনস্টিটিউটের কাছে ন্যাটোর এশীয় সংস্করণের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, এশিয়াতে ন্যাটোর মতো কোনো প্রতিরক্ষা জোট না থাকার মানে হচ্ছে, যে কোনো সময় যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় চীনের বিরুদ্ধে এশিয়ার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো প্রতিরক্ষা জোট গঠন করতে পারে।

ইশিবার প্রস্তাবটি খোদ যুক্তরাষ্ট্রই ভালোভাবে নেয়নি। আর ভারত বলেছিল, এটা ব্যক্তিগতভাবে ইশিবার মতামত হতে পারে। এশিয়ান প্রতিরক্ষা জোটের ব্যাপারে চীনও বিরক্ত এবং এর জন্য দেশটির অভিযোগের আঙুল ন্যাটোর দিকে।

বেইজিং মনে করে, দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের একক আধিপত্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা ন্যাটোর পছন্দ হচ্ছে না। এজন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানকে দিয়ে পশ্চিমারা এশিয়ায় ন্যাটো গড়তে চায়।

এ ব্যাপারে সম্প্রতি ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা সচিব গিলবার্তো তেওডারো কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা জোট গঠন করা সময়ের দাবি হলেও আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রেষারেষি বিদ্যমান রয়েছে। এগুলোর সমাধান না করে কোনো প্রতিরক্ষা জোট গড়া সম্ভব হবে না।

সূত্র: ইউরেশিয়া রিভিউ