ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ: আগেই সাবধান জাস্টিন ট্রুডো!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যেসব চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হতে পারে, তা মোকাবেলায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো একটি বিশেষ মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জাস্টিন ট্রুডো

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। এতে বৈদেশিক, জননিরাপত্তা এবং শিল্পমন্ত্রীসহ শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তারাও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনের পর কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে মনোযোগ দেবে এই কমিটি।’

কানাডা বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্য-নির্ভর দেশ। দেশটির রপ্তানির ৭৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে উত্তর আমেরিকান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (নাফটা) পুনর্বিবেচনা এবং অটো খাতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা কানাডার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

বুধবার ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেন ট্রুডো। দুই নেতা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে সম্পাদিত নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ইউএসএমসিএ) নিয়ে আলোচনা করেন। ২০২৬ সালে এই চুক্তি পুনর্বিবেচনার বিষয়েও আলোচনা হয়।

যদিও ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ট্রুডোকে ‘দুর্বল’ এবং ‘অসৎ’ বলে অভিহিত করেছিলেন, তবুও দুই দেশের সম্পর্ক বিশ্বের মধ্যে ঘনিষ্ঠ রয়েছে।

কানাডিয়ানদের আশ্বস্ত করতে বুধবার দুবার সংবাদ সম্মেলন করেন ফ্রিল্যান্ড। তিনি বলেন, ‘আমি জানি অনেক কানাডিয়ান উদ্বিগ্ন। আমি কানাডিয়ানদের বিশ্বাস দিয়ে বলতে চাই, কানাডা ঠিক থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প এবং তার দলের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। আমাদের বর্তমান বাণিজ্য সম্পর্ক ট্রাম্প ও তার দলের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির আওতাধীন।’

সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বিদেশি পণ্যের ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিছু বক্তৃতায় তিনি আরও বেশি শুল্কের কথাও বলেছেন।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক নেলসন ওয়াইজম্যান বলেছেন, কানাডার নতুন শুল্ক এবং সামরিক বাজেট বৃদ্ধির চাপের মুখে পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।

ন্যাটোর তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে কানাডা তার জিডিপির ১.৩৩ শতাংশ সামরিক বাজেটে খরচ করেছে, যা ন্যাটোর নির্ধারিত ২ শতাংশ লক্ষ্যের নিচে। ট্রুডো বলেছেন, ২০৩২ সালের মধ্যে কানাডা এই লক্ষ্য পূরণ করবে। ট্রাম্প ন্যাটোভুক্ত দেশগুলিকে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে মিত্রদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বোঝা কমে।

ওয়াইজম্যান বলেন, ‘আমি আশা করি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে সামান্য পরিবর্তন আসবে, কোন বড় ধরনের পরিবর্তন না। শুল্ক কানাডিয়ান অর্থনীতিতে ক্ষতি করবে, কিন্তু ধ্বংস করবে না। কানাডার হাতে কিছু আছে যেমন প্রতি-শুল্ক আরোপ, আমেরিকান ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্বেগ এবং কানাডার গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ।’

কানাডা সরকার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা একে অপরের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৩ সালে প্রতিদিন প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের পণ্য ও পরিষেবা দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক বিশ্বে অনন্য।

প্রতিরক্ষা, সীমান্ত নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী এজেন্সির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা রয়েছে, এবং সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও বিনোদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক মিল রয়েছে। দুই দেশ বেসবল, হকি, বাস্কেটবল ও ফুটবল লীগ ভাগাভাগি করে। প্রতিদিন প্রায় চার লাখ লোক বিশ্বের দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার হয় এবং প্রায় আট লাখ কানাডিয়ান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের কানাডিয়ান ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক রবার্ট বোথওয়েল বলেছেন, শুল্ক ও বাণিজ্য নিয়ে হঠকারী কোন পদক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে কানাডিয়ানদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।