ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে আসছে আমূল সংস্কার

রেলের টিকিট কেনা আরও সহজ, স্বচ্ছ ও যাত্রীবান্ধব করতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে টিকিট ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করছে। এই সংস্কারের অংশ হিসেবে দেশের রেলপথের রুট পরিবর্তন এবং অনলাইন টিকিট ক্রয় প্রক্রিয়ার উন্নয়ন করা হবে।

ট্রেনের ছবি

ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, উপদেষ্টা ফাওজুল রেলওয়ের ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

‘আমরা টিকিট কেনার প্রক্রিয়া সহজ করার এবং যাত্রীদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো, টিকিট ক্রয় আরও সহজলভ্য করা যাতে মানুষ সহজেই তাদের টিকিট কিনতে পারে। আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই এই পরিবর্তনগুলোর সুফল দেখতে পাবো,’ তিনি বলেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, টিকিট কেনার প্রক্রিয়ায় যাত্রী সন্তুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক যাত্রী অনলাইনে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের টিকিট না পেয়ে হতাশ হন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে কাছাকাছি স্টেশন এবং খালি সময়ের টিকিট অনুসন্ধানের ফলাফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেখানো হয়। প্রয়োজনে, বাইরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই প্রক্রিয়াটি আরও উন্নত করা হবে।

টিকিট বিতরণে সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করতে, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ম্যানুয়ালি টিকিট সংরক্ষণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপদেষ্টা।

‘রেল সচিব বা অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনেক টিকিটের আবেদন আসে এবং প্রায়ই কিছু টিকিট আগে থেকে বুক করা হতো। এই প্রথা আর চলবে না। কোন সচিব বা কর্মকর্তার অনুরোধে কোন টিকিট সংরক্ষিত রাখা হবে না। সাধারণ জনগণের অধিকার প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে,’ উপদেষ্টা বলেন।

যাত্রী ও মালবাহী পরিবহনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য অতিরিক্ত লোকোমোটিভ ও ক্যারেজ সংগ্রহের মাধ্যমে অতিরিক্ত ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায়, প্রয়োজনীয় সম্পদ দ্রুত সংগ্রহের ওপর ধ্যান কেন্দ্রীভূত করেছে।

রুট ব্যবস্থাপনার বিষয়টি উল্লেখ করে রেল উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে কিছু রুটে যাত্রীর চাহিদা কম থাকলেও ট্রেন চলাচল করে, অথচ যেখানে চাহিদা বেশি সেখানে ট্রেন নেই। ‘কোথাও কোথাও যাত্রী ছাড়াই ট্রেন চলছে, আবার কোথাও কোথাও চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ট্রেন নেই,’ তিনি বলেন।

তিনি উল্লেখ করেন যে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের জন্য ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্রেন সেবা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার টিকিটের কালোবাজারি রোধে পদক্ষেপ নিচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন)-এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এই সমস্যা সমাধানের জন্য, এবং রুট ব্যবস্থাপনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

‘টিকিটের কালোবাজারি রোধ করতে আমরা তরুণদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি। কালোবাজারিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর কার্যক্রম নেওয়া হবে, রেলওয়ের কর্মীদের সহ। এছাড়াও, জনগণের জন্য টিকিট পাওয়া আরও সহজ করার পরিকল্পনা আছে,’ উপদেষ্টা বলেন।

টিকিট বিক্রিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, যদি কোন কালোবাজারি বা অস্বচ্ছতা ধরা পড়ে, তাহলে দায়ীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

‘আমরা কালোবাজারি এবং ব্যবস্থায় যেকোন অনিয়ম দূর করার বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি,’ তিনি যোগ করেন।

অনলাইন টিকিটিং বিষয়ে তিনি জানান, টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা সহজ.কমকে বিভিন্ন চলমান সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে টিকিট না পাওয়া গেলেও কালোবাজারে অতিরিক্ত দামে টিকিট পাওয়া যাওয়ার ব্যাপক সমস্যা সত্ত্বেও, তিনি আশ্বস্ত করেন যে মূল কারণ সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

“সরকারকে কর্ম না করার জন্য সমালোচিত করা হতে পারে, তবে এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে সময় লাগবে। গত আড়াই মাস ধরে আমরা এই সমস্যাগুলির মূল কারণ খুঁজে বের করার জন্য কাজ করছি,’ তিনি বলেন।

অনলাইন ব্যবস্থার আরও উন্নতি করার জন্য কাজ চলছে, এবং সহজ অ্যাপের মাধ্যমে বিকল্প পথে টিকিট কেনার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলি তদারকি করার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ট্রেন দেরিতে ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল বলেন, সরকার সময়ানুবর্তিতার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে।

‘যাত্রীরা প্রায়ই ট্রেন মিস করার কারণে অসুবিধায় পড়েন। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছি, যদিও কখনও কখনও লাইন ক্লিয়ারেন্স বা দুর্ঘটনার মতো ঘটনা ট্রেন দেরিতে ছেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে,’ তিনি বলেন।

তিনি যোগ করেন যে, রেলওয়ের কর্মকর্তাদের এই সমস্যাগুলি সমাধানে আরও দায়িত্বশীল ভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।